বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকট চলছে। এর মধ্যে একসঙ্গে আরও ৯ চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। এতে বছরের পর বছর হাসপাতালে থাকা সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। সেই সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বদলি ৯ চিকিৎসককে বরিশাল বিভাগের চার জেলা হাসপাতাল এবং বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন করা হয়েছে। শনিবারের (১৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ রয়েছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাগজে-কলমে এক হাজার রোগীর হাসপাতাল হলেও বর্তমানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন দুই হাজার থেকে ২২০০ পর্যন্ত। প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন আরও এক হাজারের অধিক রোগী।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালে ৫০০ রোগীর চিকিৎসার জন্য যে অর্গানোগ্রাম করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী ৪৭৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন ৯৮ জন। এর মধ্যে ৯ জন চলে গেলে চিকিৎসক থাকবেন ৮৯ জন। ওই চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন তিন হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক দফতর সূত্র জানায়, হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক্স সার্জারি) ডা. মাসরেকুল ইসলামকে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক্স) ডা. সুদীপ হালদারকে বরগুনা জেলা হাসপাতালে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি) ডা. আলী আহমেদকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি) ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি) ডা. শরিফুল ইসলামকে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি) ডা. সঞ্জয় কুমার দাসকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস) ডা. তানিয়া আফরোজকে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. জয় জাখারিয়া রবকে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে এবং জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. সুপিয়ার রহমানকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ.এফ.এম এহতেশামুল হক স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদায়নকৃতদের কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হয়েছেন মর্মে গণ্য হবেন। অবমুক্তির সময় বদলিকৃতদের বর্তমান কর্মস্থলের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক দফতর সূত্র জানায়, বদলিকৃত চিকিৎসকদের পদোন্নতি হয়েছে বহু আগে। পদোন্নতি পাওয়ার পর নিয়ম রয়েছে অন্যত্র বদলির। কিন্তু করোনাকালীন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার কথা চিন্তা করে বদলি করা হয়নি। ওই বদলির আদেশ আসে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। তা এখন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আদেশ মোতাবেক শনিবার তাদের কর্মস্থল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ত্যাগ করে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করবেন জানিয়েছেন বদলিকৃত চিকিৎসকরা।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের সাবেক চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট আজ থেকে নয়, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এর মধ্যেই হাজার হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তবে সংকটের মধ্যে একসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের নয় চিকিৎসকের বদলি চিকিৎসাসেবায় প্রভাব পড়বে। মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে নয় জনের স্থল পূরণ করা। একই সঙ্গে বছরের পর বছর শূন্য থাকা চিকিৎসকের পদ পূরণেরও দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন স্বল্প সময়ের মধ্যে ওই সংখ্যক চিকিৎসক শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে দেওয়া হবে।
তবে তার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আমাকে জানিয়েছেন সচিব। এজন্য চিকিৎসাসেবায় সাময়িক সমস্যা হলেও তা বেশি দীর্ঘ হবে না। দ্রুত সমাধান হবে।