বরিশাল লঞ্চঘাটে বিনামূল্যে মাস্ক-গ্লাভস দেন হাবিব

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না’- বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার এ গান আজও মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। শুধু গান নয়, গানের কথাগুলো আজও মানুষকে ভাবায়, মানবতাকে জাগিয়ে তোলে।

 

করোনা কালের এই মহামারিতে কেউ কেউ হয়তো নিষ্ঠুরতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তবে মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে মানুষ যে মানুষের জন্য। আর তাই নিষ্ঠুরতার চিত্রগুলো মানবতার আড়ালে হারিয়ে গেছে।

 

এরকমই নতুন এক মানবতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বরিশাল নদী বন্দরে ভাসমান ক্ষুদে বিক্রেতা ২৬ বছর বয়সী তরুণ হাবিব মাহমুদ। মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক স্প্রেসহ সুরক্ষাসামগ্রীর এই বিক্রেতা স্বল্প মূল্যে তার পণ্য বিক্রি করার পাশাপাশি অসহায়-দুস্থদের মাঝে প্রয়োজন সাপেক্ষে বিনামূল্যে মাস্ক ও গ্লাভস বিতরণ করছেন।

 

তার ক্ষুদ্র ভাসমান দোকানটির সামনে হাতের একটি লেখা সাটিয়ে রেখেছেন। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘যাদের কাছে টাকা নেই তারা এখান থেকে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লোবস্ নিয়ে যান’।

 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী হাবিব মাহমুদের লেখা দেখে যারা নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছেন, তারাই বিনামূল্যে পেয়ে যাচ্ছেন মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস।

 

আর এ সুবিধাটুকু ঘাটের যাত্রীদের পাশাপাশি ভাসমান শিশু-কিশোর ও শ্রমিকদেরও দিচ্ছেন তিনি।বিক্রিতে ব্যস্ত হাবিব মাহমুদবরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা ও আলিম পাশ করা যুবক হাবিব মাহমুদ বলেন, নগরের কাউনিয়া এলাকায় তিনি পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন।

 

বাবার একটি টেইলার্স আছে, সেখানে তিনিও দর্জির কাজ করেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান সময়ে দোকানের অবস্থা ভালো না। তাই তিনি গত কয়েকদিন ধরে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক স্প্রেসহ সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন সকালে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আর বিকেলে নদী বন্দরের পল্টুনে টেবিল বসিয়ে এসব সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন।

 

তিনি বলেন, প্রথম দু’দিন বিক্রির পর দেখলাম কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে ভাড়ার বাহিরে টাকা নেই। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও অর্থের অভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে পারছেন না, তাদের দিক বিবেচনায় এনেই ফ্রি মাস্ক ও গ্লাভস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০টি মাস্ক ও গ্লাভস চাহিদা অনুযায়ী অসহায় মানুষগুলোকে ফ্রি দিয়ে যাচ্ছি।

 

তিনি বলেন, আল্লাহ যখন আমাকে ও পরিবারের বাকি ৪ সদস্যকে দুই মুঠো খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন তখন সামান্য এ উদ্যোগে ব্যবসায় কোন প্রভাব পরবে না। বরং প্রয়োজনে প্রতিদিন ২শ’ মাস্ক ফ্রি দিতেও রাজি আছি।

 

তবে মানুষ বিশেষ করে লঞ্চের যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে এখনো সচেতন নন বলে তিনি বলেন, প্রশাসন ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে যাত্রীদের সচেতন করতে যথেষ্ট কষ্ট করছেন, তারপরও যাত্রীরা আপন ইচ্ছেতে চলছেন। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারে বেশিরভাগ মানুষেরই অনিচ্ছা কাজ করছে।

 

এদিকে এই তরুণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন লঞ্চ ও বাসের যাত্রীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যুবকের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সে নিজের ক্ষুদ্র আয় থেকেও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

 

এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রতিটি লঞ্চেই তো যাত্রীদের কাছ থেকে যথেষ্ট ভাড়া নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ, সেক্ষেত্রে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতি টিকিটের সঙ্গে একটি করে মাস্ক দিলে তেমন ক্ষতি হবে না মালিকদের। বরং তখন যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে পারবেন তারা।