#

শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীদের আর্থিক আনটন সহ গ্রাম-গঞ্জে ইটারনেট ও নানান সমস্যার বিঘœতার কারনে অনলাইনে পরিক্ষামূলক ক্লাস করার তেমন কোন আগ্রহ নেই।

কোভিড-১৯ প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবের দাপুটে মার্চ মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সিদ্ধান্তের পরে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ গ্রহন করেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরমধ্যে বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে শুরু করেছে এই কার্যক্রম।

জানা গেছে, ছাত্র- ছাত্রীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে এবং সেশনজট কমাতে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে প্রার্থমিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন।

এখানে সেই আদেশের আশানুরূপ সমর্থন মেলেনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৫-১৬ সেশনের ৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন এবং ২০১৭-১৮ সেশনের ৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জন অনলাইনে ক্লাসের আওতায় আসতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস।

এতে দেখা যায় শতভাগ শিক্ষার্থীদের ভিতর থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আগ্রহী নেই অনলাইন ক্লাসের প্রতি। লকডাউনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারনে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারেনট সংযোগ সঠিকভাবে না পাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি আবার অনেক শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্টফোন না থাকা সহ চড়া মূল্য ইন্টারনেট কেনার সামর্থ অনেকের নাই। এসকল সমস্যার কারনেই অনলাইন ক্লাসের আওতায় তারা আসতে পারছে না বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।

ফেসবুকে ববি শিক্ষার্থীদের লিংঙ্কারস ইন বরিশাল ইউনিভার্সিটি নামক গ্র“পে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত জানার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় মোট ৮শত ৯৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১শত ২৩ জন অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ‘হ্যা’ ভোট দিয়েছে। বাকি সবাই ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের নানান সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন।

ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী জানান, অনেক দূর্গম এলাকায় থাকি। কল করার জন্যও নেটওয়ার্ক পাই না। আর সেখানে অনলাইনে ক্লাস করাতো বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যাদের আবার স্মার্ট ফোন নাই। স্মার্ট ফোনের কথা বাদই দিলাম। কানাডা সরকার যেভাবে সব স্টুডেন্টের জন্য অনলাইন ক্লাসের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি শুধুমাত্র ইন্টারনেট খরচ দিতে রাজি হয় তাও একটু ভেবে দেখতে হবে কারণ মোবাইল নেটওয়ার্কের যা অবস্থা!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আরিফ হোসেন জানান, পূর্ণাঙ্গভাবে অনলাইনে ক্লাস চালু করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সব শিক্ষার্থী অনলাইনের আওতায় না। ইন্টারনেট খরচেরও একটা ব্যাপার আছে। অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর কিভাবে নেট বিল পাবে? শতকরা ১০ জনও যদি অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিতে না পারে তাহলে এই কার্যক্রম ইথিকাল হবে না। সবাইকে একীভূত করাও একটা চ্যালেঞ্জ।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন জানান, অনলাইন ক্লাসের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের পরীক্ষামূলক ক্লাস শুরু করতে বলেছি। শতকরা কতজন শিক্ষার্থী অনলাইনের আওতায় আসে, শিক্ষার্থীদের কি কি সমস্যা আছে সবকিছু চিহ্নিত করা হবে। এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া মিললে লকডাউনের ভিতর নিয়মিত করা যাবে এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

ঘন্টাব্যাপী অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ইন্টারনেট বিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, অনেক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্য নেই। অনেকের স্মার্টফোনও নেই। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিল দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছি। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও সুপারিশ করা হবে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন