বরিশাল বিমানবন্দরে মই দিয়ে দেয়াল টপকে বাজারে যায় মানুষ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর এলাকায় অবস্থিত বরিশাল বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে এখন দৈনিক ৪টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজও ওঠানামা করে।

চারপাশজুড়ে রয়েছে দেয়াল। নিরাপদে উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য দেয়ালে লেখা রয়েছে ‘ সংরক্ষিত এলাকা- বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’।

তবে সেই বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে আশপাশের এলাকার মানুষ বিমানবন্দরের ভেতরে অবাধে ঢুকে পড়ছেন। কেউ কেউ বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশের জমি থেকে ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছেন, গরু-ছাগল চরাচ্ছেন।

এছাড়া বিমানবন্দরের পশ্চিমাংশ এলাকার মানুষ পূর্ব পাশের বাজার ও দোকানপাটে যাতায়াত করছেন। মানুষের আনাগোনায় সংরক্ষিত এলাকাটি এখন অরক্ষিত। তবে পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে।

বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে মানিককাঠী ও দোয়ারিকা এলাকা। ওই দুটি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিমানবন্দরের পূর্ব পাশে বাজারঘাট। বাঁশের মই ব্যবহার করে দেয়াল টপকে মানুষ পূর্ব পাশের বাজারঘাটে যাচ্ছেন।

অনেকে রানওয়ের পাশের জমি থেকে কেটে আনেন ঘাস। উত্তরাংশসহ আরও কয়েকটি স্থানে সীমানা দেয়ালের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। ওইসব স্থান দিয়ে মানুষ ও গরু-ছাগল প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।

তারা আরও বলেন, বিমানবন্দরের উত্তর দিকে খরস্রোতা সুগন্ধা নদী। নদী অনেকটা দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে নদীভাঙন তীব্র হয়েছে। বর্তমানে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন বিমানবন্দরের উত্তর দিকের সীমানা দেয়ালের কাছে চলে আসছে।

সীমানা দেয়াল থেকে সুগন্ধা নদীর দূরত্ব মাত্র ২৫০ ফুটের মতো। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে বিমানবন্দর নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আরিফ হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের মানিককাঠী ও দোয়ারিকা এলাকার মানুষ মই ব্যবহার করে দেয়াল টপকে যাতায়াত করছেন।

উত্তর দিক সহ কয়েকটি স্থানে সীমানা দেয়ালের নিচ দিয়ে মানুষ ভেতরে ঢুকে ঘাস কাটে। ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ দেখা যায় প্রায়ই। রাতে শিয়ালেরও ডাক শোনা যায়। এরই মধ্যে ওঠানামা করে যাত্রীবাহী বিমান। নিরপত্তা প্রহরীরা এসব বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন।

মাসখানেক আগে রানওয়েতে গরু থাকায় যাত্রীবাহী একটি বিমান অবতরণ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। প্রায় ১০ মিনিট ধরে আকাশে চক্কর কাটে। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা গরু তাড়িয়ে দিলে যাত্রীবাহী বিমানটি অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি একটি এয়ারলাইনসের একজন ব্যবস্থাপক বলেন. বিমানযাত্রী, পাশ ও পরিচয়পত্রধারী ছাড়া বিমানবন্দরে কারো প্রবেশের নিয়ম নেই।

আর রানওয়েতে প্রবেশের প্রশ্নই ওঠে না। তবে বিমানবন্দরে পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে সীমানা দেয়ালের পাশে মানুষের চলাফেরা প্রায় চোখে পড়ে। এসব বিবেচনা করে বলা যায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা।

বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় নিরাপত্তা প্রহরীদের কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। গরুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নেই। সামনে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য এখনই নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিৎ।

এদিকে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার সকালে আকাশপথে ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন। মুখ্য সচিবের সফরসঙ্গী ছিলেন বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকার্তা।

বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বরিশালের বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বিমানবন্দর থেকে মুখ্য সচিব ও তার সফরসঙ্গীরা বরিশাল সার্কিট হাউসে আসেন।

তবে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত ওই সময়ের মধ্যে তার চোখে বিমানবন্দরের অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তিনি বিমানবন্দরের চিত্র দেখে হতাশ হন।

এসময় তিনি (আহমদ কায়কাউস) বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরের অবস্থা ভালো দেখবেন বলে আশা করছিলেন। দ্রুত যাতে এসব সমস্যার সমাধান হয় তারও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম তালুকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, মুখ্য সচিব যেদিন এসেছিলেন সেদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বিমানবন্দরেই ছিলেন। কিন্তু মুখ্য সচিব বিমানবন্দরের চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন, এমন কোনো বিষয় তিনি দেখতে পাননি।

বিমানবন্দরের ঢিলেঢালা নিরাপত্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম তালুকদার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বরিশাল বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

নদী ভাঙনের বিষয় জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, গত ২৮ অক্টোবর একটি বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সে অনুযায়ী বিমানবন্দরটি রক্ষার জন্য ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর এলাকার ১৬৩ একর জমির ওপর নির্মিত হয় বরিশাল বিমানবন্দর। এর ১০ বছর পর ১৯৯৫ সালে এখানে বিমান চলাচল শুরু হয়। বরিশাল বিমানবন্দর দেশের ৫টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের মধ্যে একটি।