বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের ২৬.৮২ ভাগ সুস্থ, মৃত্যু ২.১১ শতাংশ

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এরমধ্যে বরিশাল নগরের অবস্থা অনেকটাই ভয়াবহ। বিভাগের ৬ জেলায় মোট আক্রান্তের অর্ধেকটাই রয়েছে বরিশাল নগরে। আবার মৃত্যুর হারে বরিশাল নগরই এগিয়ে রয়েছে।

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ চিকিৎসা নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। বাকি ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ চিকিৎসা বাড়িতে বসে করেই সুস্থ হয়েছেন। তবে বাড়িতে থাকলেও টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এসব রোগীরা।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সোমবার (২২ জুন) পর্যন্ত বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পুটয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি মিলিয়ে ছয়টি জেলায় মোট ২ হাজার ১৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৬৩ জন। যা মোট আক্রান্তের ২৬.০১ শতাংশ।

সুস্থতার হার আশাব্যাঞ্জক জানিয়ে স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস মনে করেন, দিনে দিনে মানুষ চেষ্টা করছে করোনাকে প্রতিরোধ করে চলার। আর সে কারণেই সামাজিকভাবে সবাই সচেতন হচ্ছেন এবং এতে করে সুস্থতার হার বাড়ছে।

তিনি বলেন, বরিশালে পুরুষের থেকে নারীর সংক্রমণের সংখ্যা কম। কারণ নারীরা ঘর থেকে কম বের হন। বাইরের মানুষের সংর্স্পশে তারা কম আসে বিধায় আক্রান্ত হচ্ছেন কম।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল জেলায় ১ হাজার ২৭৫। যারমধ্যে ৯২৯ জন পরুষ এবং ৩৪৬ জন নারী আক্রান্ত। অর্থাৎ এই জেলায় নারীদের চেয়ে পুরুষের আক্রান্তের সংখ্যাটা প্রায় তিনগুন। আক্রান্তের বয়স হিসেবে আবার ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিভাগে ৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। যা মোট আক্রান্তের ২ দশমিক ১২ শতাংশ।

এদিকে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশী নাগরিকসহ ভিন্ন জেলা (সংক্রমিত) থেকে আগত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে গত ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলায় মোট ১৯ হাজার ৫৬৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

যারমধ্য হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ১৭ হাজার ৫৫১ জনকে, আর এরমধ্যে ১৪ হাজার ৫০৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালে (প্রতিষ্ঠানিক) কোয়ারেন্টিনে ২ হাজার ১৮ জন রয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১ হাজার ১২৯ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

এরবাইরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৯ জন এবং এরইমধ্যে ৬০২ জনকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়েছে। এছাড়া শুধুমাত্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। যারমধ্যে ২৮ জন করোনা পজিটিভ রোগী ও বাকীরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, বিভাগের মধ্যে এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ১ হাজার ২৭৫ জন, পটুয়াখালীতে ২৪৮, ভোলায় ১৮৯, পিরোজপুরে ১৪২, বরগুনায় ১৬৩ ও ঝালকাঠিতে ১৪৭ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। যারমধ্যে গোটা বিভাগে ৫৬৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়েছেন। তাদের এরইমধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

এছাড়া মৃত্যু হওয়া করোনা পজিটিভ ৪৬ জনের মধ্যে বরিশাল নগরসহ জেলায় ১৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৫ জন, ঝালকাঠিতে ৬ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, ভোলায় ২ জন ও বরগুনায় ২ জন রয়েছেন।

অপরদিকে বিভাগের মধ্যে সর্ববৃহৎ রেডজোন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার দুটি ওয়ার্ড প্রথম দফায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ওয়ার্ড দুটি হলো ১২ ও ২৪ নং ওয়ার্ড। কিন্তু কবে নাগাদ ওয়ার্ড দুটিতে লকডাউন কার্যকর করা হবে তা জানানো হয়নি। প্রথম দফায় এই ওয়ার্ড দুটিতে লকডাউন কার্যকর করে তার অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী ওয়ার্ডগুলো লকডাউন করে করোনার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান।