বরিশাল বিএম কলেজের দুই ছাত্রাবাসে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ!

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের দুই ছাত্রবাস থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিপথগামী কয়েকজন ছাত্র এই ব্যবসার সাথে ওত:প্রত ভাবে জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদের চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও কলেজ প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যে কারণে সন্ধ্যার পরেই কলেজ ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় এবং যাদের কেন্দ্র বিন্দু থাকে দুই ছাত্রাবাস। এমনটাই জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হল ও অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষ দখলে নিয়ে ইয়াবা ও গাঁজা ব্যবসা পরিচালনা করছে ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে বিপথগামী কয়েকজন ছাত্রও। যাদের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়। কলেজের বেশ কয়েকটা পয়েন্টে বসে চলে মাদক সেবন। বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশ মঞ্চ সংলগ্ন সড়কে এবং এই মঞ্চের পিছনে মাদকের বড়সর আড্ডার জমায়েত হয়। এখানে বসেই বেশীর ভাগ লোক মাদক সেবন করে থাকে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বিভিন্ন এলাকার মাদক সেবীরা এই স্পটে বসে কলেজের বিপথগামী কয়েকজন ছাত্রকে সাথে নিয়ে মাদক সেবন করে থাকে। আর এই সব মাদকের সাপ্লাই দেয়া হয় কলেজের ওই দুই ছাত্রাবাস থেকে।

জাকারিয়া রহমান নামে মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্র জানান, ‘সন্ধ্যা হলেই ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলে অপরচিতি লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। যারা মাদক ব্যবসার সাথে পুরোপুরি ভাবে জড়িত। এদের সাথে হলে থাকা কথিত ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর ভালো সম্পর্কও রয়েছে। যে সুবাদে এই হলেই মাদকের বড় একটি চালান আসে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। আমার মনে হয় বিষয়টি কলেজ প্রশাসন অবগত রয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে এদের আইনের আওতায় আনা তেমন দু:সাধ্য বিষয় নয়।’

অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই হলে থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকে। অপকর্ম করেও তারা এখানে রাজার মত থাকে। তাদের পিছনে রাজনৈতিক সাপোর্টও রয়েছে। যে কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু বলে না। আর বললে তো হামলার শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের, তাও আবার মাদক সেবনকারী বানিয়ে। আর এদের সাথে কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকেরও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কাছেও সম্ভবত গাঁজা সাপ্লাই করে এই হল কেন্দ্রীয় মাদক ব্যবসায়ীরা। আর তাছাড়া কলেজের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা যদি এদের ইন্ধন না দিত তাহলে এরা বহু আগে ঘটি বাটি নিয়ে পালাতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষক জানান, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন মাদক ব্যবসা জমজমাট। কলেজের বেশ কয়েকটা পয়েন্টে মাদক সেবন চলে ধুমছে। এর মূল হচ্ছে দুই ছাত্রাবাস। এই ছাত্রাবাস দুটি থেকে মাদক সাপ্লাই করে থাকে বিপথগামী কয়েকজন ছাত্র। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজকে আলোকিত রাখতে পর্যাপ্ত রোড লাইট দেয়া হলেও রাতের আধারে তা ভেঙে ফেলে মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীরা। যে কারণে তারা মাদক সেবন করতে পারে নির্বিঘ্নে। আর পুলিশও সহসা ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করায় মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এই ক্যাম্পাস। এদের কারণে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। এই বিষয়টির দ্রুত সমাধান না হলে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের বদনাম হবে।

এই বিষয়ে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে মাদক ও জুয়ার একটি আসর বসে ছাত্রাবাসে। এবিষয়ে আমরা হল সুপারদের নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংএ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষক এটার মনিটরিং এ থাকবে। আমরা ৩/৪ দিন শুরুও করে ছিলাম। রমজানের জন্য স্থগিত করেছি, রমজানের পর আবার পুনরায় টহল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।