ত কয়েক বছর ধরে একের পর এক বিশালাকৃতির বিলাসবহুল বহুতল লঞ্চ সংযোজন হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে। ফলে প্রতিবছর এ রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরে আসন্ন ঈদে সরাসরি এ রুটে দিবা ও রাত্রিকালীন সার্ভিসে দুই ডজনের বেশি লঞ্চ চলাচল করবে।
তবে বছরে বছরে নৌ-যানের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না বরিশাল নদীবন্দরের পন্টুনের সংখ্যা। ফলে ঈদ-কোরবানিসহ বিভিন্ন সময়ে যাত্রীদের চাপের কারণে নৌযানের সংখ্যা বাড়লে দেখা দেয় পন্টুনের সংকট। তাতে একটি লঞ্চকে অন্য লঞ্চের পেছনে নোঙর করতে হয় এবং ঝুঁকির মধ্য দিয়েই মাঝনদীতে বসে যাত্রীদের লঞ্চে তুলতে হয়।
যদিও রোটেশন প্রথার কারণে বছরের স্বাভাবিক সময়ে পন্টুন সংকটের তীব্রতার বিষয়টি সামনে আসছে না, তারপরও দিবা সার্ভিস ও সরকারি কোনো জাহাজ বন্দরের মূল টার্মিনালে কখনোই বার্দিং বা নোঙর করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে এর কারণে যাত্রীদের প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
এ রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মাস্টার-চালকরা জানান, বরিশাল নদীবন্দরে দূরপাল্লার রুটের লঞ্চের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য তিনটি পন্টুন নির্ধারণ করা রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৩শ ফুটের কিছু বেশি হতে পারে। যেখানে বৃহদাকারের ৫-৬টি লঞ্চ বার্দিং (নোঙর) করতে পারে। আর সর্বোচ্চ ৮টি লঞ্চ বার্দিং করা সম্ভব। বছরের স্বাভাবিক সময়ে রোটেশন প্রথার কারণে এতে সমস্যা না হলেও দুই ঈদ, বিভিন্ন পার্বনের ছুটিতে লঞ্চের বার্দিং নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।
বিশেষ করে ঈদে যদি সরাসরি বরিশাল ঢাকা রুটে ১৫-২০ বা ২২টি লঞ্চ একযোগে চলাচল করে তবে বরিশাল নদীবন্দরে সেগুলো একসঙ্গে ঘাট দেওয়া সম্ভব নয়। আর বন্দরের উত্তর দিকে নাব্যতা সংকট থাকার পাশাপাশি খালের সংযোগমুখ থাকায় সেখানে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোকে বার্দিং করাও সম্ভব নয়। ফলে পন্টুন পূর্ণ হয়ে গেলে অন্য লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ থামাতে হবে এবং সেখান থেকেই যাত্রী ওঠা-নামা করাতে হবে।
এদিকে স্বাভাবিক সময়েও ভায়া রুটের লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দরে বার্দিং করতে গিয়ে হিমশিম খায় জানিয়ে মাস্টাররা জানান, অনেক সময়ই অন্য লঞ্চের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বার্দিং করে মাঝ নদীতে বসেই যাত্রী ওঠানামা করায় ভায়া রুটের লঞ্চগুলো। আর দিবা সার্ভিসে থাকা গ্রিনলাইন ও অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির নৌযানসহ সরকারি স্টিমার কিংবা জাহাজতো নদী বন্দরের মূল ঘাটে কখনোই বার্দিং করে না। তাদের জন্য মূল ঘাট থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ঘাট রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো যাত্রী যদি নদীবন্দরে ভুলে প্রবেশ করে তাকে আবার সেখান থেকে বের হয়ে মূল রাস্তায় গিয়ে স্টিমার অর্থাৎ বিআইডব্লিউটিসি’র ঘাটে যেতে হবে। আর এতে যাত্রীদের কষ্টের শেষ থাকে না।
আর এসব কারণেই বরিশাল নদীবন্দরে পন্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা অতি জরুরি বলে মনে করেন লঞ্চের মালিক-চালক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
বরিশাল বিআইডব্লিউটি’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. কবির হোসেন জানান, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যে লঞ্চগুলো চলাচল করছে তার প্রতিটির প্রস্থ সর্বোচ্চ ৪৪ থেকে সর্বনিম্ন ৩৮ ফুট পর্যন্ত। বন্দরে যে ৬টি পন্টুন রয়েছে তার এক একটি ১০০ ফুট করে। যার মধ্যে তিনটি দূরপাল্লার ও তিনটি অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চের জন্য স্বাভাবিক সময়ে বরাদ্দ থাকে। তবে ঈদ বা কোরবানির সময় পল্টুনের বেশিরভাগ অংশই দূরপাল্লার লঞ্চের বার্দিং করার জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারপরও হিমশিম খেতে হয়, অনেক লঞ্চকেই পন্টুনে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না।
যাত্রীবাহী নৌ-যান মালিকদের সংগঠন জাপ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে বহুদিন ধরেই বরিশাল নদীবন্দরে পন্টুন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বরিশাল নদীবন্দরে দু’টি পন্টুন বৃদ্ধির জন্য দাবি জানানো হয়। ওই সভায় আসন্ন ঈদে দু’টি পন্টুন বাড়িয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু জানান, বরিশাল নদীবন্দরে একসঙ্গে ২২-২৫টি লঞ্চের বার্দিংয়ের জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। যে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে বরিশাল নদীবন্দরে নতুন দু’টি পন্টুন, গ্যাংওয়ে নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন।
তবে নতুন পন্টুন স্থাপনের জন্য জায়গার প্রয়োজন। আর নদীবন্দরের দক্ষিণপাশেই রয়েছে একটি খেয়াঘাট। ব্যস্ততম যে খেয়াঘাট দিয়ে ইঞ্চিনচালিত নৌকায় কয়েক হাজার মানুষ নদী পারাপার করছে। ফলে সেটি সরানোর আগে পন্টুন স্থাপন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
তবে ঈদে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে সব প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে, যারমধ্য দিয়ে বরিশাল নদীবন্দর হয়ে যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু।
এদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় অস্থায়ীভাবে যতদ্রুত সম্ভব নতুন পন্টুন সংযোজন, নয়তো লঞ্চ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রেখে সিরিয়াল অনুসারে ঘাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com