বর্ষা শুরুর পরপরই বরিশালের বেশকিছু সড়ক হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছে নগরবাসী। প্রায়ই উল্টে যায় যানবাহন। অনেক যাত্রীকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। ভাঙা সড়কে লেগে থাকে যানজট। চলতি বছরে নগরীর একাধিক সড়কের সরেজমিন চিত্র ও তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদক করে বিডি ক্রাইম । এসব প্রতিবেদনে সড়ক মেরামতকারী বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা, অর্থ সংকট ও উদাসীনতার চিত্র উঠে আসে।
গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর টানা ভারি বর্ষণে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে নগরীর বেশিরভাগ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে।সংশ্লিষ্টরা এজন্য অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) জলাবদ্ধতা রোধে গত মাস থেকে নগরীর খালগুলো পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে সম্প্রতি ভারি বৃষ্টিপাতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য নেই বিসিসির দায়িত্বশীলদের কাছে।
বিসিসির দেওয়া তথ্য মতে, নগরীতে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে পিচ-ঢালাই সড়ক প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর লাগাতার ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশিরভাগ অলিগলি।সরেজমিনে নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোড, বিএম স্কুল লেন, নথুল্লাবাদ থেকে মধুমিয়ার পুল-সোবাহান মিয়ার পুল এবং মড়কখোলার পুল পর্যন্ত, কাউনিয়া হাউজিং সংলগ্ন সড়ক এবং কাউনিয়া থানার গলি, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, টিয়াখালি সড়ক, নিউ সার্কুলার রোড, সাগরদী জিয়ানগর, পলাশপুরসহ বিভিন্ন সড়কে চলতি বর্ষায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শামিমা জাহান জানান, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কাউনিয়া মড়কখোলার পুল পর্যন্ত খালপাড়ের অধ্যাপক ইউনুস খান সড়কটির অবস্থা অনেকদিন ধরে বেহাল।
এই দিকে মড়কখোলার পুল থেকে সিটি করপোরেশনের শেষ মাথা মতাসার পর্যন্ত দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তার বেহাল দশা ।
এটি এখন পুরোপুরি যান চলাচলের অনুপযোগী। পাশের খালটি পরিস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনও শেষ হয়নি।নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে পথচারী এবং যান চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, অগণিত খাদের কারণে এ সড়ক দিয়ে রিকশা বা অটোতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের এই সড়কটি দিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পথে যাতায়াত করেন সাধারণ মানুষ।১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, ব্যাপ্টিস্ট মিশন সড়কটি বিগত মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়।
তখনকার সংরক্ষিত কাউন্সিলর এ কাজের ঠিকাদার ছিলেন। তিনি নিম্নমানের কাজ করায় এলাকাবাসীর এমন ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত রয়েছে।নগরীর শ্রীনাথ লেনের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মো. ওয়াহেদ জানান, বৃষ্টি হলেই তার এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করতে হয় স্থানীয়দের।নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগরের বাসিন্দা ফাইজুল ইসলাম সজল বলেন, সড়ক উঁচু করে নির্মাণ না করায় সামান্য বৃষ্টি বা কীর্তনখোলায় অস্বাভাবিক জোয়ার হলে ওই এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে যায়। ফলে এখানকার অলিগলি খানাখন্দে ভরে গেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে সাগরদি, রুপাতলী হাউজিং এলাকায়।এ বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে ড্রেন না থাকায় পানি নামতে পারে না। খালের নাব্য না থাকায় এখন সড়কের বৃষ্টির পানিও আটকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খাল পরিস্কার করা যেমন দরকার, তেমনি খনন করা আরও জরুরি। চলতি বর্ষায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মো. ফারুক বলেন, লাগাতার বৃষ্টিপাতে নগরীর সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তার কাছে তথ্য নেই। সড়কের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিসিসি থেকেও এ পর্যন্ত কোনো উদ্যেগ নেওয়া হয়নি। তবে জলাবদ্ধতা রোধে নগরীর খালগুলো পরিস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।