বরিশাল নগরীর চরকাউয়া খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাটে চলছে মোবাইল লুডুর নামে ডিজিটাল জুয়া

:
: ২ years ago

বরিশালে জুয়ায় পরিণত হয়েছে লুডু খেলা। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে চলছে লুডু খেলার নামে জুয়ার আসর। বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত এ খেলাটি এক সময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল এই যুগে এসে খেলাটি জুয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে।

এ কারণে অনেকে এটিকে ‘ডিজিটাল জুয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখনই এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে বরিশাল নগরীর চড়কাউয়া খেয়াঘাট, লঞ্চঘাট, রুপাতলী, নথুল্লাবাদ, চাঁদমারি, বান্দ রোড, শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, পোর্ট রোডসহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় দেখা গেছে ‘ডিজিটাল জুয়ার’ আসর।

অপরদিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মাঠে অবাধে চলছে স্মার্টফোনে লুডু খেলা। শিক্ষার্থী ছাড়াও খেলাটির সাথে বেশি সম্পৃক্ততা রয়েছে নিম্ন পেশার লোকজনের।

বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন জড়িয়ে পড়ছেন এই ডিজিটাল জুয়ায়। এর ফলে তাদের সংসারে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক কলহ। সারাদিনের আয় তারা ব্যয় করছেন লুডু খেলার পিছনে।

খোলা মাঠ, চায়ের দোকান এমনকি রাস্তার পাশে দলে দলে বিভক্ত হয়ে লুডু খেলার আসর বসছে। খেলার স্থান হিসেবে বাদ যায়নি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ পর্যন্ত।

চারজন ব্যক্তি আর একটি স্মার্টফোন হলেই শুরু হয়ে যায় ডিজিটাল জুয়া। ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ জন অংশ নিতে পারেন খেলায়। অনলাইনে খেলা সম্ভব হলেও ৪ জন মিলে খেলায় অংশগ্রহণের প্রবণতাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল রাতেও নগরীর চড়কাউয়া খেয়াঘাট সংলগ্ন স্থানে পরিত্যক্ত ভ্যানের উপর লুডুর আসর জমান বেশ কয়েকজন দিনমজুর শ্রেণীর লোক। আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খেলোয়াড় জানান, ৪ জন মিলে খেললে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।

খেলোয়াড় প্রতি সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয়। এছাড়া খেলায় অংশ না নিয়েও খেলোয়াড়ের হার-জিতের উপর বাজি ধরেন অন্যরা।

সেক্ষেত্রে প্রতিবারের খেলায় হাজার টাকার উপরেও বাজির দর চলে। পেশায় ভ্যানচালক রুবেল (ছদ্মনাম) নামের এক খেলোয়াড় জানান, মোবাইলে লুডুর বাজি খেলা এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।

প্রতিদিন গড়ে ২০০ টাকা দরের বাজিতে খেলি। কখনও হারি, কখনও জিতি। হারলে তো পকেটের সব টাকা শেষ। আর যেদিন জিতি সেদিন ভ্যান চালানোরও প্রয়োজন পড়ে না।

তবে হারের মাত্রাই বেশি বলে স্বীকার করেন তিনি। চাঁদমারি এলাকার এক নারী জানান, আমার স্বামী পেশায় রিক্সা চালক আর আমি ঝি-এর কাজ করি।

কিছুদিন আগে আমার স্বামী কমদামি একটি স্মার্টফোন কেনেন। আর এরপরেই জড়িয়ে পড়েন মোবাইলে লুডু খেলায়। লুডু খেলায় তার আসক্তি এতটাই বেড়েছে যে নিজের আয় করা অর্থ সবই বাজিতে ব্যয় করছেন।

এমনকি বাজার করার মতো টাকাও তার হাতে থাকছে না। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই আছে। এর কবল থেকে কবে নিস্তার মিলবে তা আল্লাহই জানেন।

এদিকে শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়েছে বাজিতে লুডু খেলায়। খেলার টাকা যোগাতে তারা পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করছে। পিছিয়ে পড়ছে পড়ালেখায়।

এ অবস্থায় ফ্রি ফায়ারের মতো মোবাইল অ্যাপস লুডু কিং ডাউনলোডে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

এবিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, আমরা বিষয়টি দেথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।