বরিশাল নগরীতে ১ বছরে ১৩৮ টি বিবাহ বিচ্ছেদ

:
: ৬ years ago
আদালত

বরিশাল নগরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ দম্পত্তি তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান চেয়ে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী বিচ্ছেদের আবেদন করেছে। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তালাক সংক্রান্ত বাৎসরিক প্রতিবেদনে। ২০১৭ সালের ওই প্রতিবেদনে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১৩৮ দম্পতি তাদের দাম্পত্য জীবন ইতি টেনেছেন। এরমধ্যে ৮৯জন স্ত্রী বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরকীয়া প্রেম, চাহিদার অপ্রতুলতা, মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়া, অর্থনৈতিক টানপোড়ন ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এরজেরে বিচ্ছেদের ঘটনাও বেড়েছে। এছাড়াও দেন মোহর ও খোরপোশের শর্ত থেকে স্বামীরা রেহাই পেতে স্ত্রীদের বিচ্ছেদে বাধ্য করছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ১৩৮ দম্পত্তির খোলা তালাকের ঘটনা ঘটেছে। যারমধ্যে ৮৯জন স্ত্রী কর্তৃক এবং ৪৯জন স্বামী কর্তৃক বিচ্ছেদ হয়েছে। মাস অনুযায়ী গত বছর জানুয়ারীতে মোট তালাক হয়েছে ১৫টি। এরমধ্যে নারী কর্তৃক ১১ এবং পুরুষ কর্তৃক চারটি তালাকের ঘটনা ঘটেছে।

ফেব্রুয়ারী মাসে ১৭টি তালাকের মধ্যে ১৩টি স্ত্রী ও স্বামী কর্তৃক চারটি। মার্চে আটটি তালাকের মধ্যে পাঁচটি নারী ও তিনটি পুরুষ কর্তৃক তালাক হয়েছে। এপ্রিল মাসে ১১টির মধ্যে সাতটি নারী এবং চারটি পুরুষ, মে মাসে ১৫টির মধ্যে নয়টি নারী এবং ছয়টি পুরুষ, জুন মাসে ছয়টির মধ্যে তিনটি নারী ও তিনটি পুরুষ, জুলাই মাসে ১১টির মধ্যে ছয়টি নারী ও পাঁচটি পুরুষ, আগস্টে আটটির মধ্যে সাতটি স্ত্রী ও একটি স্বামী, সেপ্টেম্বরে ১৩টির মধ্যে আটটি নারী এবং পাঁচটি পুরুষ, অক্টোবরে ১৫টির মধ্যে নয়টি নারী এবং ছয়টি পুরুষ, নভেম্বরে ১২টির মধ্যে পাঁচটি নারী এবং সাতটি পুরুষ, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে সাতটির মধ্যে ছয়টি স্ত্রী এবং বাকি একটি তালাক দিয়েছে স্বামী। মোট এক বছরের তালাকের মধ্যে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসে স্ত্রী কর্তৃক তালাকের ঘটনা কম। এ ছাড়া বাকি অন্যান্য মাসে তালাকের দিক থেকে স্ত্রীরা এগিয়ে রয়েছেন।

সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে আরও জানা গেছে, আদালত কিংবা কাজীর মাধ্যমে যেসব তালাকের ঘটনা ঘটছে তারই একটি প্রমান বিসিসিতে প্রেরন করা হয়েছে। এরসাথে তালাকের কিছু প্রমানপত্রও তাদের দেয়া হয়েছে।

সেইসব প্রমানপত্র অনুযায়ী নারীরা তালাকের দিকে এগিয়ে রয়েছেন। সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক দ্বন্দ, দাম্পত্য কলহ ও নির্যাতনের ঘটনা থেকেই তালাকের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বিসিসি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়োগপ্রাপ্ত কাজীদের সাথে আলাপকালে তালাকের ওই একই কারণ বেরিয়ে এসছে। অবশ্য এরমধ্যে দাম্পত্য কলহের কারনটাই বেশি উঠে এসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর এক বিয়ের কাজী জানান, তাহমিনা মৌ নামের এক নারী তার স্বামীকে খোলা তালাক দিয়েছেন। তিনি তালাকের কারণ হিসেবে দাম্পত্য কলহকে সামনে নিয়ে এসেছেন। রয়েছে পরকীয়ার কারনও। বেশ কয়েকজন নারী তালাকের কারণ হিসেবে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য তালাকে নারীদের এগিয়ে থাকার বিষয়ে একাধিক বিয়ের কাজী বলেন, তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ এবং নিয়ম-কানুন রয়েছে। যেমন স্বামী কর্তৃক তালাক দিলে স্ত্রীকে কাবিনের পাশাপাশি তার খোর-পোশের টাকা পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় তালাক হবেনা। কাবিন এবং খোরপোশের টাকা থেকে রেহাই পেতেই স্ত্রী কর্তৃক তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে।