বরিশাল নগরের পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ছয়টি খুঁটি ঘিরে পাকা-কাঁচা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বসবাস করছে কয়েকটি পরিবার। এতে এসব পরিবার ও আশপাশের লোকজন যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বরিশাল নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর এলাকার গুচ্ছগ্রামের ১ ও ৬ নম্বর ব্যারাকের জমিতে পাঁচটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ নম্বর ব্যারাকের জমিতে হাসান মিয়া ও অপর একজন যৌথভাবে তাঁদের বরাদ্দকৃত জমিতে দোতলা ভবন নির্মাণ করছেন। ভবনের মাঝ–বরাবর খুঁটি রেখে দোতলার ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। ছাদের অল্প দূরত্বেই রয়েছে সঞ্চালন লাইন। এর সামনে আরেকটি খুঁটি ঘিরে অপর একটি দোতলা টিনের ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া। এই এলাকায় ১ নম্বর গুচ্ছগ্রামের জমিতে আরেকটি দোতলা ইমারত নির্মাণ করেছেন আয়নাল ব্যাপারী নামে আরেক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ঘেঁষে বিপজ্জনকভাবে রয়েছে এমন দুটি খুঁটি। এর একটু সামনেই তিনতলা অপর একটি ভবন ঘেঁষে রয়েছে আরও একটি খুঁটি। আবদুস ছাত্তার নামের এক ব্যক্তি তিনতলা বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। পাশের আরেকটি খুঁটি ভেতরে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি টিনের ঘর।
আয়নাল ব্যাপারী বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। মাস ছয়েক আগে পুরোনো ঘর ভেঙে এখানে তিনি পাকা ইমারত নির্মাণ করেছেন। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, এই বাড়ি নির্মাণের আগে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো অনুমতি নেননি এমনকি ওজোপাডিকোকেও লিখিতভাবে জানাননি। তিনি আরও বলেন, ‘আমার জমি রয়েছে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আমার জমি থেকে বিদ্যুতের এসব খুঁটি অপসারণের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।’
আবদুস ছত্তার অসুস্থ হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে তাঁর স মিলের ব্যবস্থাপক দুলাল মিয়া বলেন, ‘এসব বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’
এলাকার বাসিন্দা কাওসার হোসেন বলেন, ‘বাড়ির মধ্যে ও বাড়ি ঘেঁষে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করায় আমরাও সব সময় আতঙ্কে থাকি। জানি না, কখন কী হয়ে যায়।’
আমানতগঞ্জ এলাকার আরেক বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণভাবে এভাবে বাড়ি নির্মাণ করায় যেকোনো মুহূর্তে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এটা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, ইমারত বিদ্যুৎ পরিবাহী। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে আরও বিপজ্জনক। তিনি জানান, যেহেতু এটা সচল লাইন (লাইভ লাইন), সে ক্ষেত্রে এটা বন্ধ (শাট ডাউন) না করে কিছুতেই এই ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের কারও না কারও সহায়তা ছাড়া এই কাজ করা দুঃসাধ্য।
এ সম্পর্কে ওজোপাডিকোর বিতরণ বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য রঞ্জন সরকার বলেন, অন্তত ২০ বছর আগে ওই এলাকায় ৩৩ কেভি এই লাইন স্থাপন করা হয়েছে। তখন এই এলাকায় কোনো আবাসিক স্থাপনা ছিল না। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তাই এ ধরনের স্থাপনা যদি কেউ নির্মাণ করে থাকে, তবে তা অনুমতি ছাড়াই করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে নোটিশ দেওয়া হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এমন কোনো তথ্য পাইনি। এটি একটি বিপজ্জনক কাজ এবং ভবনগুলো সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। অবৈধ কাঠামো অপসারণ করা হবে।’
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com