ঈদের বাজার জমে ওঠার আগেই বরিশাল নগরের সড়কে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর, আবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দুঃসহ যানজটে নাকাল নগরবাসী।
নগরের এক ডজন জায়গায় এই যানজট রোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। অবৈধ যানের কারণেই ছোট্ট এ নগরে এত জট বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
ট্রাফিক বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঈদের আগেই বাণিজ্যিক এলাকার কয়েকটি সড়ক ব্লক করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ থ্রি হুইলার রয়েছে।
নগরীর বিএম কলেজের ছাত্রী তানজির মোস্তফা সিম্মী বগুড়া রোড থেকে চকে এসেছেন মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে। তিনি জানান, ‘যা ভিড় বাপরে। গরম আর যানজটে দুঃসহ অবস্থা।
তিনি বলেন, ঈদবাজারে ঢুকতে সড়কের অলিগলি কোনো জায়গা খালি নেই। গরমে যেন সিদ্ধ হওয়ার জোগাড়।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বটতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায় যানজট তীব্র হচ্ছে। সেখান থেকে কাকোলির মোড় পর্যন্ত ১১টার দিকে আরও বাড়ে যানজট।
দুপুর ১২টা পার হলে ফলপট্টির মোড়, নগরভবন, জেলখানার মোড়, সদর রোড, লঞ্চঘাট, পোর্টরোড, নতুন বাজার, চৌমাথা, নথুল্লাবাদ, রুপাতলী যানজট তীব্রতর হয়ে ওঠে। ইফতারের আগে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার তথ্যমতে, ৩ বছর আগে নগরে ২ হাজার ৬৯০টি থ্রি হুইলারের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
বর্তমানে শহরে চলাচলরত থ্রি হুইলারের সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। তবে বিআরটিএ জানিয়েছে, নগরে বৈধ থ্রি হুইলার ৫ হাজারের নিচে।
সে অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার অবৈধ অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, ইঞ্জিনচালিত রিকশা এই নগরে চলাচল করছে। এতে যানজট ক্রমশই বাড়ছে। আসন্ন ঈদে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আ. রহিম বলেন, নগরে যানজটের অন্যতম সমস্যা পার্কিং।
বিশেষ করে গির্জা মহল্লা, লঞ্চঘাট, সদর রোডে পার্কিং করা হয় বেশি। অবৈধ অটোরিকশার কারণে যানজট আরও বাড়ছে।
তাঁরা চিন্তা করছেন ঈদের আগে কয়েকটি সড়ক ওয়ানওয়ে এবং চকের মতো কোনো কোনো বাণিজ্যিক সড়কে যানবাহন ঢুকতে দেবেন না।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে এই নৈরাজ্যের পেছনে সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক বিভাগ এবং অবৈধ যানবাহন মালিক-চালকেরা দায়ী।
ঈদ আসার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা বাড়ছে সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বছরের পর বছর কী করে অবৈধ যান চলাচল করছে, সড়ক দখল করে পার্কিং সৃষ্টি করছে।
তিনি মনে করেন, প্রায় ১০ হাজার অবৈধ যান নগরে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।
মধ্য রমজানের আগেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না হলে ঈদবাজারে আসা জনদুর্ভোগ ভয়াবহ হবে বলে তিনি মনে করেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঈদে যানজট রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা, একমুখী যান চলাচল, সড়কে পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিকের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
নগরের ঈদবাজারে মানুষের ভিড় বাড়বে। মানুষ যেন ভোগান্তি ছাড়া কেনাকাটা করতে পারেন, সে জন্য নগরের চকবাজার, কাটপট্টি, লাইন রোড, গির্জা মহল্লার কিছু অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন হচ্ছে। এ জন্য যানজট পরিস্থিতি তদারকি শুরু করেছেন।