বরিশাল টু চট্টগ্রাম যোগাযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সোহেল আহমেদ:
বরগুনা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন কারখানা শ্রমীক সিরাজ। পারিবারিক কারণে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। বরিশাল থেকে রকেট যোগে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন। রাত তখন সোয়া দুইটা। স্টেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে দির্ঘ লাইনে দাড়ালেন সিরাজ। টিকিট কাউন্টারের সামনে সিরাজের মত দক্ষিনাঞ্চল থেকে আসা শত শত যাত্রীরা অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পর একজন (ব্লাকার) জানতে চান কোথায় যাবেন। সিরাজের উত্তরের আগেই টিকিট লাগব নাকি আবারো জানতে চান ব্লাকার। ব্লাকারের নিকট থেকে টিকিটের দ্বিগুন মুল্য শুনে সিরাজের মাথা গরম হল। উচ্চ স্বরে সিরাজ ব্লাকারের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে লাগল। অবৈধ টিকিট বানিজ্যের বিরুদ্ধে ছিলো সিরাজের প্রতিবাদ।

সিরাজ ও ব্লাকারের মধ্যে তর্কবিতর্ক যখন তুঙ্গে অন্য যাত্রীরা,নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তখন নিরব দর্শক। প্রথমে সিরাজের সাথে একজ ব্লাকারের তর্কযুদ্ধ হলেও ঘটনাক্রমে টিকিট বানিজ্য চক্রের পাঁচ ছয়জন এসে হাজির। টিকিটের বৈধতা প্রশ্নে মুর্খ সিরাজকে বোঝাচ্ছে কয়েকজন, আবার বৃদ্ধ না হলে মাটিতে পুষে ফেলার ধমক দিচ্ছে হাত উচিয়ে। যাত্রীদের প্রতি ব্লাকারদের এমন আচরন নিত্তদিনের।

কে শুনবে কার কথা,দশ বছর অবৈধ টিকিট বিক্রি করে আসছে পা হাড়ানো পঙ্গু এক ব্লাকার। তারমতে তারা অন্যায় কিছুই করছেন না। দিগুণ মুল্যে বিক্রি করার টিকিটের টাকার কমিশনের ভাগ যে স্টেশনে নিয়োজিত অন্যরাও আছে তা স্পস্ট বোঝা যায় এই ব্লাকারের নানা যুক্তিতে। যিনি টেলিফোন রিসিভার তিনিও সহোযোগীতার নামে নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে ৫০/৬০টাকার বেশি নিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে দিচ্ছেন। তাও কিন্তু কাউন্টার থেকে নয়। সবার গন্তব্য ওই ব্লাকার। একারণে কাউন্টার থেকে ১৫/২০জনকে টিকিট দেয়ার পরই সিট নেই ঘোষনা আসে।

স্থানিয় সুত্র ও সরজমিন পরিদর্শনকালে জানাগেছে এসব টিকিটবানিজ্যসহ ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগের নানা চিত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানিয় একজন চা দোকানি জানান,ওদের (ব্লাকার) নিকট থেকে টিকিট না নিলে পরে সিট পাওয়া যায় না। স্টেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারাও ব্লাকারদের সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকে। তাই অগ্রিম টিকিটের নামে প্রায় ৮০ভাগ টিকিট আগেই ব্লাকারদের হাতে চলে যায়। ফলে কাউন্টারে টিকিট মিললেও সিট (আসন) পাওয়া যাচ্ছে না।

নিরুপায় যাত্রীরা বিনা সিটেই টিকিট নিয়ে দাড়িয়ে চট্টগ্রাম যাতায়াত করছেন। শুধুকি তাই! ট্রেন চলাকালে কর্তব্যরত ব্যক্তিরাও করছে অবৈধ বানিজ্য। তবে তাদের ধরন ভিন্ন। অর্থাৎ বিনা টিকিটেই যাত্রীদের উঠাচ্ছে ট্রেনে। নির্ধারিত আসনেও বসিয়ে দিচ্ছে। কিন্তুু কিভাবে তা সম্ভব? খোজ নিয়ে জানা যায়,চাঁদপুর থেকে লাঙ্গলকোট নামক একটি স্টেশনের জন্য সংরক্ষিত ফাকা আসনগুলোতেই এসব বিনা টিকিটের যাত্রীদের বসিয়ে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। লাঙ্গলকোট আসার পর ছেড়ে দিতে হচ্ছে চাঁদপুর থেকে আসা যাত্রীদের আসন। তখন ওই টিকিটবানিজ্য চক্রটির সন্ধান মেলে না। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে গাদাগাদি করে সীমাহীন কস্টে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। এখন প্রশ্ন আসতে পারে বিনাটিকেট যাত্রীরা কিভাবে চট্টগ্রামে স্টেশনে চেকারদের ফাকি দিবে? উত্তর ভুক্তভুগী যাত্রীদের অজানা নয়।

এদিকে রেল ভ্রমন নিরাপদ ও নির্ভীগ্ন করতে চাঁদুপুর রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি একটি জরুরি সমন্নয়ক সভায় চাঁদুপুর জেলা প্রশাসন থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে দ্বায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে। কিন্তুু জেলা প্রশাসনের কথা মানছে না কেউই। ফলে অসহায় যাত্রীরা অর্থ শাস্রয় ও যে নিরাপদেরর জন্য বরিশাল- থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে চাঁদুপুর রেলওয়ে স্টেশনকে বেছে নিয়েছিলো তা ক্রমেই অনিরাপদ হচ্ছে। পদে পদে যাত্রীদের হয়রানি আর লাঞ্চিত হতে হচ্ছে। ফলে সরকারের ডিজিটালাইজেশন যোগাযোগের ব্যপক সফলতা থাকলেও ২০/২৫ জন সংঘবদ্ধ ব্লাকার চক্রের কারণে সব সফলতাই যেনো বিফলে যাচ্ছে। তাই ভুক্তভুগী যাত্রীসাধারন ও স্থানিয়দের মতে এই স্টেশনে ভ্রাম্মমান আদালত পরিচালনা করা জরুরী। তবে হয়ত যাত্রীদের দুর্ভোগের মাত্রা কমে যেতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষেরও একটি মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক দ্বায়ীত্ব পালন করে দুর্ভোগের চিত্র প্রত্যক্ষ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারে বলে মনেকরছে সচেতন মহল।