বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযানঃ ৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

আজ ২১ মার্চ শনিবার দিনভর জেলা প্রশাসক বরিশাল ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, অজিয়র রহমানের নির্দেশনায় বরিশাল মহানগরীতে দুইটি এবং দশটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নেতৃত্বে ১০টি টিম মোট ১২ টি মোবাইল কোর্ট টিমের মাধ্যমে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। বরিশাল জেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা অমান্যকারী বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এবং করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মোবাইল কোর্ট অভিযান অব্যাহত আছে।

আজ সারাদিন অভিযান চালিয়ে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার দুইশত টাকার জরিমানা আদায় করা হয়। সকাল থেকে বরিশাল নগরীতে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে নগরীর সদর রোডের শাহিন কমপ্লেক্সে মেডি সান সার্জিক্যাল এন্ড সায়েন্টিফিকে অভিযান চালায়। সেখানে মাস্কের দাম বেশী রাখার প্রমাণ পাওয়ায় মেডিসান সার্জিক্যাল এন্ড সাইন্টিফিক দোকানের মালিককে ১০ হাজার টাকা পরে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় খুশবু স্টেশনারি দোকানে ৫ হাজার টাকা এবং চৌমাথা এলাকায় বুক পয়েন্ট নামক দোকানে ৫ হাজার টাকা অধিক মূল্যে মাস্ক বিক্রয় করার অপরাধে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। জরিমানা করার পাশাপাশি তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এহেনু অপরাধ পরিহার করার জন্য পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গণসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য করে লোকালয় ঘোরাফেরা করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তির খোঁজ খবর নিয়ে এবং তাদের সাথে এ তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বিদেশ ফেরত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা হোম কোয়ারেন্টাইনে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছেন। এসময় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গণসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করেন। মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরিশাল মোঃ জিয়াউর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের একটি টিম। এদিকে অপর একটি মোবাইল কোর্ট টিম নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাজার মনিটরিং বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেন।

নগরীর বাজার রোডস্থ পিয়াজ, চাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে এবং সদর রোডস্থ ওষুধের দোকানে বাজার মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন বরিশালের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল ইসলাম। অভিযানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রয়কারী দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা না থাকা এবং অধিক দামে পণ্য তেলের দাম বেশি রাখার অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ অয়েল মিল কে ১৫ হাজার টাকা এবং পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় একই আইনের ৩৮ ধারা মোতাবেক মেসার্স মনমোহন রায় নামক গ্রোসারি দোকানে ১০ হাজার টাকা এবং একটি ওষুধের বেশি দাম রাখার অপরাধে সদর রোডস্থ ওষুধের দোকান মা মেডিসিন কর্ণার কে একই আইনের ৪০ ধারায় ১০ হাজার টাকাসহ ৩ টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩৫ হজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চলমান করোনাভাইরাস সংক্রান্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করা এবং অন্যয্য মুনাফা না করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়।

এসময় আইনশৃংখলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‍্যাব ৮ টিম। আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সার হাট বাজার এবং বাগধা বাজার এলাকায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আগৈলঝাড়া চৌধুরী রওশন ইসলাম। এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এবং ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ অনুযায়ী বিভিন্ন ধারায় তিনজন ব্যবসায়ীকে ৪ হাজার ২ শত টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি অভিযোগের ভিত্তিতে একজন প্রবাসফেরৎ ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। যাচাই করে দেখা গেছে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা অমান্য করছেন এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বানারীপাড়া উপজেলায় দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ ও মাস্ক/স্যানিটাইজার এর মূল্যবৃদ্ধির কারনে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় মাস্ক/স্যানিটাইজার এর মূল্যবৃদ্ধির কারনে ৬ টি দোকান কে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বানারীপাড়া শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ।

করোনাভাইরাস কে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে সে লক্ষ্যে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া, বাটাজোর ও গৌরনদী বন্দর বাজার এলাকায় আজ মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গৌরনদী ফারিহা তানজিন। এসময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ ও কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী ৮ জন আড়তদারকে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আজ বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা বাজারে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাবুগঞ্জ নুসরাত জাহান এ সময় অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় এবং পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার না করার অপরাধে ২ জন ব্যবসায়ীকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় আইনশৃংখলা রক্ষায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের একটি টিম সহযোগিতা করেন। হিজলা উপজেলার কাউরিয়া বাজারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ও দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিজলা মোঃ আমিনুল ইসলাম।

এ সময় পেঁয়াজ ও আলুসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য অধিক মূল্যে বিক্রয় করার অপরাধে ৫ জন ব্যবসায়ী কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এসময় মোবাইল কোর্টকে আইনানুগ সহযোগিতা করছেন হিজলা থানার পুলিশ ফোর্স। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট কোচিং খোলা রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিক্তিতে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গিয়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ পাওয়া যায়।

পাশাপাশি ১ জন বিদেশফেরত প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইনে নেই এমন সংবাদের ভিক্তিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় উক্ত ব্যক্তি ০১ মাস পূর্বে দেশে ফিরেছেন এবং বাসায়ই অবস্থান করছেন। এছাড়া বরিশাল সদর, উজিরপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী উপজেলায় বিদেশফেরত প্রবাসী ও ব্যক্তিদের তালিকা অনুযায়ী সরেজমিন হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং করোনাভাইরাস কে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, অজিয়র রহমান বলেন জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।