জাকারিয়া আলম দিপু :: ১২ জুন বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে বরিশাল জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ণাঢ্য ঈদ পুনর্মিলনী-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও স্মৃতিচারণায় দিনভর মুখর ছিলেন । পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান যোগ ১৯৫১ থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬৮টি ব্যাচের প্রায় দুই হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নবীন-প্রবীণ সকল সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে এক অনন্য আবেগঘন মিলনমেলা। মিলনমেলায় পুরোনো সহপাঠীদের দেখে পুলকিত ও রোমাঞ্চিত হন অনেকেই। গল্প, আড্ডায় মজেন তাঁরা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ফিরে যান সেই কৈশোর-তারুণ্যে বিদ্যালয় জীবনে। দিনভর আনন্দ, আড্ডা, স্মৃতিচারণা আর উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল বরিশাল জিলা স্কুলের প্রাঙ্গণ এবং আশপাশ।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে। এরপর আয়োজন করা হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা স্কুল থেকে শুরু হয়ে বরিশাল টাউন হল ও নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার স্কুলে ফিরে আসে। শোভাযাত্রায় ছিল স্কুল ব্যান্ড দলের তালে তালে ব্যাচভিত্তিক রঙিন পদযাত্রা, যা ছিল সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।পরে বরিশাল ক্লাবের টেনিস লনে মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ১৯৫১ ব্যাচের ছাত্র হাবিবুর রহমান,বরিশাল জিলা স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সবিতা রানী হালদার, ১৯৫৯ ব্যাচের ছাত্র সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রকৌশলী ড. শামীমুজ্জামান বসুনিয়া এবং ১৯৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. হারুন অর রশিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ১৯৭২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালসহ আরও অনেক প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী।
রাতে টেনিস লনে অনুষ্ঠিত হয় হয় স্মৃতিচারণা, র্যাফল ড্র,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং পরে নৈশভোজ।
বরিশাল জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজক কমিটির আহবায়ক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব রাজিবুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সফল করার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ।তারা আরো জানিয়েছেন, প্রাক্তনদের মধ্যে বন্ধন ও সৌহার্দ্য আরও দৃঢ় করতে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
মিলনমেলায় অংশ নেওয়া বিদ্যালয়টির ৬৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধুদের দেখা পেয়ে। তাঁদের সঙ্গে সেই স্কুলজীবনের নানা স্মৃতি রোমন্থন করেছি। এটা সত্যিকারার্থেই একটি মধুর সময়, যা স্মৃতিতে অমলীন থাকবে আজন্ম।’
ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজনের আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি আয়োজনের চেষ্টা ছিল। নানা কারণে তা হয়ে উঠছিল না। এবার আমরা সেই আয়োজন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।’ এতে ৬৮টি ব্যাচের অন্তত দুই হাজার সাবেক শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছেন।
বরিশাল জিলা স্কুল এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রাচীন, বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণবঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ ঐতিহ্যবাহী বরিশাল জিলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মি. এন. ডব্লিউ গ্যারেট। ১৮২৯ সালে ‘বরিশাল ইংলিশ স্কুল’ নামে বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এর ব্যয়ভার ও পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন থেকে নাম হয় ‘বরিশাল জিলা স্কুল’।এটি বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন মাধ্যমিক স্কুল।
বর্তমানে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রভাতী ও দিবা দুটি শাখায় তৃতীয় শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
স্কটল্যান্ডের নাগরিক হেনরি বেভারেজ ছিলেন তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার (বর্তমানে উপজেলা) কালেক্টর। ১৮৮৬ সালে তাঁর লেখা দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে বিদ্যালয়টির বর্ণনা রয়েছে। এতে তিনি বাংলার এই ম্যানচেস্টারের নদী-প্রকৃতির প্রশংসা করেন। এই স্কুল সম্পর্কে বেভারেজ লেখেন, ‘এই অঞ্চলের প্রতিটি মহকুমা সদরে একটি করে ইংলিশ স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের ইংলিশ স্কুলটি শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।’