বরিশাল কারাগারে ঈদেও মুক্তি পাচ্ছেন না ৮১ কয়েদী

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বাকী সাজা মওকুফ না হওয়ার কারনে নিজ ঘরে ফিরতে পারছেন না বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮১ জন বন্দি। নানা অপরাধে তাদের সাজা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও তাদের মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। কারও দুই বছর আবার কারও ছয় মাস আগে বাকী সাজা মওকুফ করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হওয়ায় তাদের মুক্তি পেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে অেিভাযোগ করেছেন এসব কয়েদীর পরিবার।

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে বরিশাল,ভোলা,পটুয়াখালী,পিরোজপুর,ঝালকাঠী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সাজা মওকুফের অপেক্ষায় ৮১ জন বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক নারী রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ৮১ বন্দির সাজা মওকুফের জন্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায়ে (সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ) চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের এক বাসিন্দা হত্যা মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে একটি আদালত তাকে সাজা দেন। ২০১৬ সালে তার বাকী সাজা মওকুফ না করার কারনে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে ওই কয়েদীসহ ৮১ জন বন্দি রয়েছেন। যাদের বাকী সাজা আড়াই বছর থেকে ছয় মাস আগে মওকুফ করার কথা ছিল।

জানা গেছে,বাংলাদেশ কারা বিধি ১ম খন্ডের ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন তথা ৩০ বছর সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের রেয়াত সহ ২০ বছর পূর্তীতে ইতোপূর্বে (এ প্রক্রিয়ায়) বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ভূমিকা নেওয়ায় জেল কোড প্রক্রিয়ার গুরুত্ব শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ওই ধারা অব্যাহত ছিল। ২০১২ সালে এ প্রক্রিয়ায় বন্দীদের মুক্তি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বাকী সাজা মওকুফ হওয়ায় একজন কয়েদী মুক্ত হন। জেল কোর্ড অনুযায়ী চলমান বন্দী মুক্তি প্রক্রিয়া প্রায় ৬ বছর যাবত বন্ধ হয়ে গেছে। ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী মুক্তি না পাওয়ার কারনে কারাগারে বন্দীরা হতাশ জীবন-যাপন করছে। এসব বন্দীরা অনুতপ্ত জীবনের ২০টি বছর পরিবার-পরিজন থেকে অন্ধকার কারাগারে পড়ে রয়েছে। স্বজনদের দাবী বন্দীদের জীবনের শেষ সময়টুকু পরিবারের কাছে থেকে নিজ ভিটেমাটিতে মরতে চায়। আর কিছুদিন পরে পবিত্র কোরবানীর ঈদ। বাকী সাজা মওকুফ না হওয়ায় এবারও বন্দীরা কারাগারে ঈদ করবেন। এসব বন্দীদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ সরকার প্রধান ও “মানবতার জননী” শেখ হাসিনা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করবেন।

বরিশাল কারাগারের জেলার ইউনুস জামান বলেন, বরিশাল কারাগারে যেসব বন্দির বাকী সাজা মওকুফ করা হবে তাদের শনাক্ত করার জন্য কারা অধিদফতরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে সর্বশেষ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একজন কয়েদী মুক্ত হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের বাকী সাজা মওকুফ করে প্রত্যয়নপত্র পাঠাবে না ততদিন পর্যন্ত তাদের কারাগারে থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শক(ডিআইজি) মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্দির বাকী সাজা মওকুফের জন্যে নিয়মানুযায়ী কারা অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে। কারা অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বিশেষ আলোচনা চলছে। ডিআইজি মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান বন্দীদের মুক্তির পথ বন্ধ হয়নি,এখনও খোলা রয়েছে।

তবে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব আহমেদ এর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এক মুহুর্তও বন্দীরা কারাগারে থাকবে না।কিন্তু জেল কোড অনুযায়ী বাকী সাজা মওকুফ না হওয়ায় অনেকে কারাগারে রয়েছেন।