বরিশাল আ’ লীগ সভাপতি জাহাঙ্গিরের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড়, আগামীকাল বিক্ষোভ

লেখক:
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গিরের একটি বক্তব্যের জেরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। জাহাঙ্গির গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের ভোট ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শান্তি সমাবেশে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। নগর আওয়ামী লীগের অনেকেই সভাপতির এমন মন্তব্যে বিব্রত। প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগের একাংশ। এদিকে চার বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর কমিটি ভেঙে জাহাঙ্গিরকে বহিষ্কারসহ নতুন নেতৃত্বের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

গত বুধবার শান্তি সমাবেশের আড়ালে নগরে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শোডাউন দেওয়া হয়। ওই সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গির বলেন, `আমাদের পাকা ফসল কেটে আর একজনে ঘরে তুলবে তা হতে দেওয়া হবে না। আমরা কোনো বহিরাগতকে সুযোগ দেব না। সিটি নির্বাচনে আমাদের গাধা বানিয়েছে। ওই নির্বাচনের মতো আর খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। এবার খেলা হবে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাবে। প্রশাসন ব্যবহার করে বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগ নেই।

ওই ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতি ও আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলেন অনেক নেতা-কর্মী। নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ফেসবুকে লেখেন, `জাহাঙ্গির সাহেবে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে সংগঠন বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর বিচার চাই।’

কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব লেখেন, উনি জামায়াতের দালাল, তাঁকে বহিষ্কার করা দরকার। শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখেন, `সভাপতি গঠনতন্ত্র বিরোধী কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। চার বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গির জানান, তিনি শান্তি সমাবেশে যা বলেছেন সঠিক বলেছেন। তাঁর বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাবে কী বলতে চেয়েছেন। এটি নিয়ে যারা হেয়প্রতিপন্ন করতে চার তাঁরা কারা? তিনি দাবি করেন, মহানগরের সম্মেলন হয়েছে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি। কৌশলগত কারণে তাঁরা ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেননি।

মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, `গত ১২ জুনের সিটি নির্বাচন হয়েছিল ইভিএম পদ্ধতিতে। সেই নির্বাচন সম্পর্কে নগর সভাপতি জাহাঙ্গির প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় নির্বাচনেও প্রশাসন দিয়ে ব্যালট ভরার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জাহাঙ্গির নিজের ছেলের বিয়ের টাকা জেলা পরিষদ থেকে ব্যয় করেছেন। তিনি বাকশালি করে বিএম কলেজে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। নগর কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। জাহাঙ্গিরের বহিষ্কারের দাবিতে শনিবার নগরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করবে বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা।

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, `আমাদের প্রত্যেকরই সংযত হয়ে কথা বলা উচিত। জাহাঙ্গির ভাইয়ের বক্তব্য ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।’ অপরসহ সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, `সভাপতি যেহেতু বলেছেন তাঁর বক্তব্য ঠিক আছে, সেহেতু এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। তিনি যদি দলের বিরুদ্ধে কথা বলেন তবে মহানগর আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, `দলের দায়িত্বে থেকে বিতর্কিত এমন মন্তব্য করে সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন জাহাঙ্গির। এটি শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। তাঁর এ ধরনের মন্তব্যে আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হয়েছে দলীয়ভাবে তা দেখা উচিত।