বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর টার্মিনালে সোলার প্যানেল স্থাপনের ৮ দিন পর তা বিকল হয়ে গিয়েছিল। এরপর ৮ বছর ধরে এটি বন্ধ। সোলার প্যানেলটি কেন কাজ করছে না, তা নিয়ে কোনো ধরনের তদন্তও হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সোলার প্যানেলের কোনো সুফল পায়নি বন্দরের যাত্রীরা। উলটো এটি বসানোর ফলে ছাদ ফুঁটো হয়ে বৃষ্টির দিনে ভেতরে পানি পড়ে। এতে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র।
জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নদীবন্দর বরিশাল। এই বন্দরের উন্নয়নে ২০১০ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন নৌ-পরিবহণমন্ত্রী উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর ভবনটির উদ্বোধন করেন।
উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ বর্গফুট এলাকায় তিনতলা আধুনিক টার্মিনাল ভবন, দেড় হাজার বর্গফুট এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, ১২শ মিটার স্টিল সীমানাপ্রাচীর, রিটেইনিং দেওয়াল, ১২০ ফুটের ৬টি পন্টুন, চারটি স্টিলের গ্যাংওয়ে নির্মাণ, ৪০০ বর্গফুটের কার্গোশেড ও পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন।
এছাড়া নৌবন্দর টার্মিনালে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার প্যানেল বসাতে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের ১১ জুন প্যানেল স্থাপন করা হয়। কিন্তু মাত্র ৮ দিন পর এটি অকার্যকর হয়ে যায়। সেই থেকে টানা ৮ বছর ধরে বন্ধ সোলার প্যানেলটি। এজন্য নিুমানের সামগ্রী সরবরাহকেই দায়ী করেছেন নৌবন্দর সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ-এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এই প্যানেলটি ভবনের ছাদে স্থাপনের পর থেকে রুমের ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে। এ কারণে কয়েক বছর আগে বন্দর কার্মকর্তার রুমের ছাদে টাইলস বসানো হয়। এতে ওই রুমের মালামাল রক্ষা পেলেও অন্য রুমে পানি পড়ে আসবাবপত্র ও কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার প্রকৌশল বিভাগকে বলার পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এখন বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয় আমাদের। দেড় কোটি টাকার সোলার প্যানেলটি থাকলে আমাদের এত বিদ্যুৎ বিল দিতে হতো না। কেন এই সোলার কাজ করছে না-এ বিষয়ে এখনো কোনো তদন্ত বা আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
বরিশাল নৌবন্দরের টিকিটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, এই নৌবন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এই সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর কোনো সুফল পাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ-এর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে সোলার প্যানেলটি অপসারণের জন্য ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি কোনো কাজে আসে না, তাছাড়া এই প্যানেলের কারণে ভবনের ছাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই আমরাও চাই এটা যেন অপসারণ করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কাজটি প্রকৌশল বিভাগ করেনি। এটি করেছে বিআইডব্লিউটিএ-এর তৎকালীন এমএমই বিভাগ।