একটা সময় ছিল শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পাশাপাশি গ্রন্থাগারে (লাইব্রেরি) বুঁদ হয়ে পড়ে থাকত। আগে নিত্য নতুন বিষয় জানা, দেশি-বিদেশি লেখকদের বই পড়ার জন্য কতো না আগ্রহ ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ সেটা অনেকাংশে কমে গেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের ফলে গ্রন্থাগার থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে এর বিপরীতেও আছে অনেকে। যারা কিনা এখনো একাডেমিক ক্লাসের পাশাপাশি দিনের অনেকটা সময় গ্রন্থাগারে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম।
বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ঘুরে জানা গেছে, সেখানে প্রায় ৭০ হাজারের অধিক বই থাকা সত্ত্বেও তিনকক্ষ মিলিয়ে এর প্রতিদিনের পাঠক সংখ্যা সর্বোচ্চ দুইশ। মাঝে মাঝে এর কমও হয়।
এছাড়াও এর নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা রয়েছে অর্ধশতাধিকেরও কম। এর ফলে বিভাগীয় এই গণগ্রন্থাগারে কর্মরত কর্মচারীদের দিনের অনেকটা সময় এক প্রকার ঝিমিয়ে পার করতে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চারতলা বিশিষ্ট এই গণগ্রন্থাগার ভবনটির বাইরের অংশে শ্যাওলা পড়ার কারণে প্রথমে গেট থেকে ভেতরে ঢুকতেই পাঠকদের মন ম্লান করে দেয়। আর পাঠকের সংখ্যা কম থাকায় অনেকটা নিস্তব্ধ অবস্থায় থাকে ভবনটি। ফলে এক প্রকার ভয়ও কাজ করে পাঠকদের মনে।
এদিকে প্রথমেই গণগ্রন্থাগারে শিশুদের জন্য রাখা পাঠকক্ষে গিয়ে দেখা গেল একজন কর্মচারী ছাড়া পুরো কক্ষটিই ফাঁকা পড়ে আছে। তবে কক্ষের স্বাক্ষর-বইতে প্রায় ৪৫ জন শিশু শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর রয়েছে। যারা কিনা ওই দিন গণগ্রন্থাগারে বই পড়তে এসেছিল।
একই চিত্র চতুর্থ তলার বিজ্ঞান ও রেফারেন্স পাঠ কক্ষেও। এখানে মাত্র দুইজনকে কক্ষের দুই কর্নারে বসে পত্রিকা পড়তে দেখা গেছে। কিন্তু খাতায় দেখা গেল ৫০ জনের স্বাক্ষর। তবে এই দুটি কক্ষের থেকে সাধারণ কক্ষে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বই পড়া অবস্থায় দেখা গেছে। আর এই কক্ষের স্বাক্ষর বইতে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৭৫ জন পাঠকের স্বাক্ষর রয়েছে।
গণগ্রন্থাগারের একাধিক কর্মচারী জানান, বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু এখন তিন ভাগের দুই ভাগ চেয়ারই ফাঁকা পড়ে থাকে। তাছাড়া এখন যারা আসছে তারাও নিয়মিত না। তবে বিভাগীয় এই গ্রন্থাগারে জবস কর্নার খোলায় ইদানিং পাঠকের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ সময় তারা আরও জানান, প্রচার–প্রচারণার অভাবেই আজ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের এই দশা। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির বিষয়টিও রয়েছে। এখন আর কেউ গ্রন্থাগারে আসতে চায়না। সবাই নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল ওয়াদুদ জানান, বই পড়তে ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে অনেকেই এই গ্রন্থাগার মুখী হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হলেও বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়তে তার ভালো লাগে। তাই প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে বই পড়তে আসেন। এ সময় প্রচারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার মুখী করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান ওয়াদুদ।
এদিকে এই গণগ্রন্থাগারে বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। রয়েছে আরও বেশকিছু সমস্যা।
বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান ও কাম-উপপরিচালক মিছবাহ উদ্দিন জানান, এই গণগ্রন্থাগারে জনবলের সংকট রয়েছে। তবে দৈনিক পাঠকের সংখ্যা তিনশ থেকে চারশ বলে দাবি করেন তিনি।
আর জনবল সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানান বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ, ২০০৬ সালে নির্মিত এই ৪ তলা ভবনটিতে ২ হাজার ৩৪০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে ৬৪ হাজার ৪০০ বইয়ের সমাহার নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার। আজ বই সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৭৩টি। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয় ছাড়াও কম্পিউটার, ইংরেজি, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বই রয়েছে। বড়দের পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের জন্যও বই।
এছাড়াও গ্রন্থাগারে বিশেষত বঙ্গবন্ধু কর্নার ও জবস কর্নার নামে দুটি কর্নার রয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও চাকরি সম্পর্কিত একাধিক বই রয়েছে।
এদিকে গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন ১৯টি জাতীয় পত্রিকা এবং ৬টি আঞ্চলিক পত্রিকা পাঠকদের পড়ার জন্য রাখা হয়। তাছাড়া সপ্তাহে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত এই বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার খোলা থাকে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com