দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে করোনার নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলেছে। সরকারী হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ২ হাজার ১৮১ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের পাশাপাশি বরগুনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এনিয়ে দক্ষিনাঞ্চলে গত ৩ মাসে ৩৯ হাজার ৩৭৯ জনের ডায়রিয়া অক্রান্তের কথা জানাল স্বাস্থ্য বিভাগ। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। লাগাতর অনাবৃষ্টির সাথে অব্যাহত তাপপ্রবাহ এবং নদ-নদীতে সাগরের লবনাক্ত পানি উঠে আসায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।
তাপ প্রবাহের কারনেও ডায়রিয়া আক্রাান্তদের মাঝে দ্রুত পানি শূণ্যতা দেখা দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে স্মরনকালের সর্বোচ্চ ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৬ ডিগ্রী বেশী।
এখনো ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার অবস্থা যথেষ্ঠ ঝকিপূর্ণ। বরিশাল মহানগরী সহ জেলর সার্বিক পরিস্থিতিও ভাল নয়। মহানগরীর জেনারেল হাসপাতালের ৪ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের খোলা মাঠের তাবুর নিচে এখনো গড়ে ৪০-৪৫ জন পর্যন্ত রোগী চিকিৎসাধীণ থাকছে।
গত এক সপ্তাহ দক্ষিনাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৮১ জনে। এসময়ে মারা গেছেন ৩ জন। আর গত একমাসে ২৪ হাজার ৫৬৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় যে ২ হাজার ১৮১ জনের ডায়রিয়া অক্রান্তের কথা বলা হয়েছে, তার ৬১৮ জনেই ভোলাতে। দ্বীপজেলা ভোলা জেনারেল হপাসপাতাল সহ জেলার সবগুলো উপজেলা হাসপাতাল ও কাচিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনো ধারন ক্ষমতার তিনগুনেরও বেশী ডায়রিয়া রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে।
জেলাটিতে এ পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের ওপরে। তবে কোন মৃত্যু সংবাদ নেই বলে স্বস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।
পটুয়াখালীতেও গত ৪৮ ঘন্টায় আরো ৪০২ জনের ডায়রিয়ায় আক্রান্তর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪ জনের মৃত্যুর সাথে ৯ হাজার ১৩৮ জনের আক্রান্ত হবার কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বরগুনাতেও গত ৪৮ ঘন্টায় আরো ৩২১ জন আক্রান্তের সাথে একজনের মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায়। জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নে ৫৫ বছর বয়স্ক আবদুল মালেক নামে এক ব্যক্তি জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। বরগুনাতে এপর্যন্ত ৬ হাজার ৫৬৬ জন অক্রান্তের বিপরিতে ৩ জনের মৃত্যু হল ডায়রিয়ায়।
প্রতিদিনই জেলাটিতে ডায়রিয়া আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে। এ জেলার বিভিন্ন খালের পানিতে পর্যন্ত জীবানু সনাক্ত করেছে ঢাকার আইইডিসিআর-এর পর্যবেক্ষন টিম। জেলাটিতে এ পর্যন্ত যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তার সবই গত একমাসে। আক্রান্তদেরও ৭৫ ভাগই এসময়ে।
বরিশাল মহানগরী সহ জেলাটিতে গত ৪৮ ঘন্টায় নতুনকরে ২৬৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলাটিতে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজরেরও বেশী মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত। মারা গেছেন ৫ জন। যার সবই বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। বরিশাল মহানগরীর নিকট দুরে ঝালকাঠী জেলায়ও গত ৪৮ ঘন্টায় আরো পৌনে ৩শ মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। জেলাটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬২৮ জন। তবে কোন মৃত্যু সংবাদ নেই ।
পিরোজপুরেও সরকারী হিসেবে গত ৪৮ ঘন্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৪ জন। জেলাটিতে এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
এদিকে দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার সিসি ও ৫শ সিসি’র ৯০ হাজার ব্যাগেরও বেশী আইভি স্যালাইনের মজুত রয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে।