এস এন পলাশ॥ বরিশাল নগরীতে ৩ শতাধিক হোটেল রেস্তোরা থাকলেও ভ্যাটের আওতায় রয়েছে প্রায় ‘শ’ খানেক। এসি, নন-এসিসহ বাকী হোটেল রেস্তোরাগুলো বছর জুড়ে রয়ে গেছে ভ্যাটের আওতামুক্ত। কিন্তু সরকার রাজস্ব হারালেও পকেট ভরছেন মাঠপর্যায়ের সহকারী ভ্যাট কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান। মাসোহারা নিয়ে তিনি পোয়াবারো হলেও ভ্যাটের আওতায় আনছেনা হোটেল-রেস্তোরাগুলোকে। আর মাসতুতো ভাই সম্পর্কে মনিরুজ্জামানকে মাসোহারা দিয়ে মোটা অংকের ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে হোটেল রেস্তোরার মালিকরা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, হোটেল-রেস্তোরা, সুইট মিট মালিক সমিতি ও হোটেল-রেস্তোরা শ্রমিক ইউনিয়ন’র তথ্য মতে নগরীতে ‘এ’ গ্রেড মানের হোটেল রেস্তোরা রয়েছে ৪১ টি। ‘বি’ গ্রেড মানের রয়েছে ৭০ টি এবং ‘সি’ গ্রেড হোটেল রেস্তোরা রয়েছে ২শ।
শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল হোসেন বলেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৩ শতাধিক হোটেল-রেস্তোরা রয়েছে। নিয়মিত আমাদের সংগঠনের সদস্যরা সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। তবে হোটেল রেস্তোরা সুইট মিট মালিক সমিতির সভাপতি বিষ্ণু ঘোষ তাদের মালিক সমিতি ব্যানারে মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে দাবী করে।
ভ্যাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা মালিক সমিতির ৪০টির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকলেই নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করি।
অথচ কাষ্টমস্ এক্সসাইজ ভ্যাট সূত্রে জানা যায়, ভ্যাটের আওতায় প্রায় ‘শ’ খানেক হোটেল রেস্তোরা আছে। কিন্তু হোটেল রেস্তোরা সংগঠন সূত্রে ৩ শতাধিক হোটেল রেস্তোরার অস্তিত্ব থাকলেও এ নগন্য সংখ্যক কেন ভ্যাটের আওতায় রয়েছে।
এ নিয়ে একাধিক সূত্র নাম অপ্রকাশের শর্তে জানায়, আমাদের নাম প্রকাশ করবেন না। কারন পরবর্তীতে এসে আইনের মার-প্যাচে ভ্যাটের পরিমান বারিয়ে দেবে। আমরা তো ভ্যাট দেই। অনেক হোটেল রেস্তোরা মাঠ পর্যায়ের সহকারী ভ্যাট কর্মকর্তাকে প্রতিমাসে ২/৩ হাজার টাকা মাসোহারা দিয়ে ভ্যাট মুক্ত থাকছেন। অথচ, এই মাসোহারা’র বিপরীতে প্রতিটি হোটেল রেস্তোরা কমপক্ষে আরো ৩/৪ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
সূত্রে আরো জানাগেছে, হোটেল-রেস্তোরাগুলোতে যা কেনা বেচা হয় সেই তুলনায় ভ্যাট যা নির্ধারিত হয় তার নামে মাত্র ভ্যাট দেয়া হয় সরকারি নিয়ম মেনে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানকে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মাসোহারা দেয়া হয়। যদিও নিয়ম রয়েছে সারাদিন যে টাকা বিক্রি হবে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল রেস্তোরার শতকরা ১৫% এবং নন এসি হোটেল রেস্তোরাকে দিতে হবে ৭%। কাগজে কলমে থাকলে তা বাস্তবায়ন করছে না সহকারী ভ্যাট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। শুধু তাই নয়, সদর রোড, বগুড়া রোড, সাগরদী, রুপাতলী, নবগ্রাম রোড, সিএন্ডবি রোড এলাকায় দায়িত্বরত এই মনিরুজ্জামান অভিজাত প্রথম শ্রেণীর হোটেল রেস্তোরা গুলো থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে যায় প্রতিদিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাজেমস্ বিরানী হাউজের এক কর্মচারী জানায়, নিয়মিত ভ্যাট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টাকা নিয়ে যায়। মালিক কত টাকা দেয় তা সঠিক ভাবে বুঝিনা, কিন্তু টাকা নিতে দেখি। রেস্তোরাটিতে দৈনিক প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিকিকিনি হয়। অথচ প্রতি মাসে ভ্যাট দেয় মাত্র ৮/১০ হাজার টাকা। এমন চালচিত্র সকাল সন্ধা, হোটেল আকাশ, হোটেল ঘরোয়াসহ একাধিক অভিজাত রেস্তোরায় রয়েছে। এসবই মনিরের যোগসাজস। এদিকে গোটা নগরীতে মাত্র ৬/৭ জন সহকারী ভ্যাট কর্মকর্তা কাজ করে। এর মধ্যে মনিরুজ্জামান বেপরোয়া ভাবে আর্থিক লাভবান হচ্ছে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার অভিযোগও রয়েছে।
কিন্তু মনিরুজ্জামানের সোজা কথা, ‘সরকারি ভ্যাট কিভাবে আদায় করবো বা কতো আদায় করবো তা সাংবাদিকদের বলবো কেন?’ বলে উত্তেজিত হয়ে উচ্চবাচ্য বলতে থাকে।
এই ব্যাপারে ভ্যাট কর্মকর্তা খবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বরিশালে ভ্যাট আদায় সন্তোষজনক। তবে আমাদের মাঠ পর্যায়ে যারা কর্মরত আছেন তারা অনেকেই ভাল কাজ করেন। তবে দুই একজন মাঠকর্মকর্তারা একটু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলেও যদি কোন লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।