নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গায়েব হয়ে যাওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জেনারেটর কেলেংকারির ঘটনায় এবার দুই উর্ধতন কর্মকর্তা দুদকের কাছে ফেঁসে যেতে পারে।অনিয়মের বিষয়ে বিসিসি কতৃপক্ষ দায়সারাভাবে তদন্ত করে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান এবং পানি শাখার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান স্বপনকে কৌশলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও দুদকের তরিৎ পদক্ষেপের কারনে আবারও ওই দূর্নীতির বিষয়টি লাইম লাইটে চলে আসে। আর এতে করে অভিযুক্তরা প্রাথমিকভাবে পার পেয়ে গেছে বলে মনে করলেও গতকাল দুদক কর্মকর্তরা তদন্তের সার্থে সিটি কর্পোরেশনে এলে অনেকটা ছাই চাঁপা আ্গুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা হয়।
ঘন্টা খানেক সময় দুদক কর্মকর্তরা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।দুদকের তদন্ত টিম প্রদান করার পরে ওই দুই কর্মকর্তা তাদের খয়েরখাদের সাথে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে জরুরী গোপন বৈঠকে বসে বলেও সুত্র নিশ্চিত করেছে।এর পূর্বে ২৩মার্চ তারিখে বরিশাল দূর্নীতি দমন কমিশনের সহকারি পরিচালক মোঃ সিফাত উদ্দিন সাক্ষরিত দুটি নোটিশ সিটি কর্পোরেশনে প্রেরন করা হয়। এর একটিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামনের বিরুদ্ধে জেনারেটর ক্রয়ের কাজে ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহনসহ জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে চিঠি প্রেরন করে। সেখানে বরাদ্দপত্রের কপি,দরপত্র প্রদানের আদেশ,পত্রিকার কপিসহ মোট ১৫টি বিষয়ের উপর কাগজপত্র প্রেরনের নির্দেশ দেয়। আরেকটি চিঠিতে সুষ্ঠ অনুসন্ধানের সার্থে বক্তব্য শ্রবন এবং গ্রহনের নিমিত্তে ২৮ মার্চ নির্বাহী প্রকৌশলীর উপর নিভর্রশীল স্ত্রী ও ছেলে/মেয়েদের নামে অর্জিত সম্পদের সকল রেকর্ড ও কাগজপত্রসহ বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হবার জন্য অনুরোধ করা হয়।
জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাবার পরে শাসক দলের একটি সংগঠনের ছত্রছায়ায় ঘটনা ধামচাাঁপা দেবার আপ্রান চেষ্টাও চালিয়েছিল যে চেষ্টা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বকেয়া বেতনভাতা আদায়ে পরিচালিত আন্দোলনে ওই ব্যাক্তি অগ্রবর্তী ভুমিকা পালন করেছে। প্রসঙ্গতঃ পাঁচ বছর আগের কেনা কোটি টাকার মেশিন কয়েক বছরের ব্যবধানে বেমালুম হাওয়া হয়ে যায়। জনস্বার্থে কেনা ওইসব মেশিন ক্রয় থেকে শুরু করে ¯’াপন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা হয়েছিল বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে। আর এ বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য।
একবার এ সংক্রান্ত ঠিকাদারের পেশকৃত বিল আটকিয়ে দেন তৎকালীন (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র আওলাদ হোসেন দিলু। তবে, মেয়র হিরনের মৃত্যুর পরে পৃষ্ঠ পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যায় চিত্রপট। কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় ভূয়া জেনারেটরগুলো সক্রিয় দেখিয়ে কোটি টাকার বিল উত্তোলন করে নেয়া হয়। আর ভাগাভাগির অর্থ দিয়ে কেউ পদোন্নতি আবার কেউবা কয়েক লাখ টাকা দিয়ে বেসরকারি একটি সং¯’ার সদস্য পদ পায়। অনুসন্ধানে এবং প্রাপ্ত তথ্যের সুত্রমতে ২০১০-১১ অর্ধ বছরে বরিশাল নগরীতে ব্যাপক লোড শেডিং শুরু হয়। আর এর প্রভাবে পানির পাম্পগুলো সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অবস্থা এমন দাড়ায় যে,সে সময় পানির জন্য নগরবাসী বিক্ষোভ পর্যন্ত করে। বিষয়টি প্রয়াত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের নজরে এলে তিনি ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মন্ত্রণালয়ে ১০ টি জেনারেটর সরবরাহের আবেদন করেন। যেগুলো দিয়ে বিদ্যুৎ না থাকলেও পানির পাম্পগুলো সচল রাখা যেত। সে মতে বরিশাল জনস্বাথ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিদেশী অর্থায়নে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ আনে। ওই বছরেই স্থানীয় ঠিকাদার মনজুরুল আহসান ফেরদৌসকে দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের কার্যাদেশ দেয়।
দরপত্রে উন্নত মানের মেশিন ক্রয়ের জন্য জার্মান, ইউকে এবং আমেরিকার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে বিপত্তি দেখা দেয় মেশিন বরিশালে আনার পরে। যন্ত্রাংশ সঠিক মানের কেনা হয়েছে কিনা তা দেখতে ৩টি জেনারেটর নগর ভবনে আনা হয়। নগর পিতার সামনে বসে তৎকালিন দায়ীত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান এবং সহ- প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগন মেশিন গুলো সচল করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়। বহু তদবির চালিয়েও ওই বিল ছাড় করতে পারেনি। সুত্রমতে, যে তিনটি দেশের কথা কার্যাদেশে উল্লেখ ছিল সেখান থেকে মেশিন গুলো কেনা হয়নি। বরং নিম্নমানের চায়না মেশিন সরবরাহ করা হয়েছিল। যার সর্বো”চ দর ছিল ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। সে হিসেবে ১০টি মেশিনের দাম হয় ১০ লাখ টাকা।
বাকি অর্থ সংশ্লিষ্টরা মিলে মিশে হজম করে বলে গোপন সুত্র জানায়। এদিকে সাবেক মেয়র হিরনের মৃত্যুর পরে পুনরায় গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ওই চক্রটি নতুন মেয়রের সামনে মেশিনগুলো সচল দেখিয়ে সব বিল উত্তোলন করে নেয় আর মেশিনগুলো নগরীর কয়েকটি পানির পাম্পে জ্ঞাপন করে। এ বিষয়ে, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান জানান, পিডল্বিউডিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এখানে তার (নির্বাহী প্রকৌশলীর) কোন দায়ভার নেই। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং তথ্য প্রাপ্তীর জন্য আবেদন করা হলে তাদের নিকট কোন কাগজপত্র নেই বলে জানান তিনি।পরে অবশ্য বলেন সব পানি শাখায় রয়েছে।
পানি শাখায় গিয়ে চলতিদায়িত্ব প্রাপ্ত (নির্বাহী প্রকৌশলী পানি) কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথমে মেশিনের ক্যাটালগের কাগজ পত্র আছে বলে স্বীকার করে পরে অদৃশ্য কারনেই তিনি সব দায়ভার জনস্বা¯’্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে মাথায় চাপিয়ে সকল কাগজপত্র তাদের দপ্তরে আছে এমনটা জানায়। দরপত্র আহবান করেছে সিটি কর্পোরেশন তাহলে কাগজ কেন জনস্বাস্থ্য দপ্তরে এর কোন সদুত্তর মেলেনি বিসিসি’র সংশ্লিদের কাছ থেকে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জ্ঞাপনকৃত মেশিনগুলো অতি নিম্নমানের হওয়ার কারনে স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে। আর বর্তমানে মেশিনগুলো কি অবস্থা রয়েছে তার কথা কেউ বলতে পারে না।
এমনকি আদৌ বহাল আছে কিনা তারও হদিস নেই। বরিশাল নগরীতে মোট পানির পাম্প রয়েছে ৩২টি আর জেনারেটর কেনা হয়েছিল ১০ টির জন্য। গোপনে প্রাপ্ত ম্যানুয়ালের তথ্য অনুযায়ী ৪৪ হর্স পাওয়ার সম্পন্ন জেনারেটর কিনতে বলা হয়েছিল।তবে চায়না থেকে ক্রয় করা জেনারেটর গুলো ছিল অতি নিম্নমানের। এমনটা ঘটেনি যে, মেয়র হিরনের বাতিল করা বিল পেয়ে ঠিকাদার নতুন মেশিন সরবরাহ করেছে, যে কারনে বর্তমান মেয়র বিল পাশ করিয়েছে। তার মানে ওইসব নিম্মমানের যন্ত্রাংশ সমৃদ্ধ মেশিনগুলোই যাদুর কাঠির ছোয়ায় উ”চমান সম্পন্ন হয়ে যায় আর বিলও পাস করা হয়।
গোপন ওই সুত্র মতে আরো জানা গেছে, ওই সময় ঠিকাদারের নিকট থেকে প্রাপ্ত কমিশনের অর্থে একজন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলতি দায়িত্ব নেয়। অন্যজন প্রায় কোটি টাকার পাহাড় গড়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা দিয়ে ‘ঘাসফুল’ নামক একটি সংগঠনের সদস্যপদ কিনে নেয়। এছাড়াও ফরিদপুরের জামায়াত নেতা মুজাহিদের সাথে পারিবারিক সম্পর্কের কারনে সরকারের উন্নয়ন মূলক কার্যক্রমগুলোতে বাধাবিঘœ সৃষ্টি করছে। আর পরোক্ষভাবে ওই দুই কর্মকর্তার ব্যাক্তিগত উন্নয়ন ঘটেছে। বিদ্যুতের লোড শেডিং কমে আসায় মেশিনগুলো চালানোর প্রয়োজন পড়েনি বরং দীর্ঘদিন অচল থাকায় হয়ত ¯’ায়ী নষ্টের তালিকায় নাম লিখিয়েছে অথবা টোকাইদের হাত ধরে ভাঙ্গারীর দোকানে ঠাই হয়েছে জনগনের অর্থে কেনা জেনারেটর গুলোর।