নাস্তা খাওয়া শেষে বিল দেওয়ার সময় ১০ টাকা নিয়ে ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে বিবাদকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।
এ নিয়ে বিক্রেতা দোকান ম্যানেজার, কর্মচারী, ভোক্তার মধ্যে সৃষ্ট মারমারি গিয়ে ঠেকে সড়ক অবরোধ করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও দোকান ভাংচুর করা পর্যন্ত।
যেখানে ধর্ম অবমাননা করার মতোও অভিযোগ ওঠে।
আর পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে থানা পুলিশের দুই সদস্যও আহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার কিছু আগে বরিশাল নদী বন্দর (পূরাতন লঞ্চঘাট) সংলগ্ন এলাকায় তুলকালাম ওই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
প্রত্যাক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সৌরভ ঢালী নামে হাজী মোহাম্মদ মহসীন মার্কেটের দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে নাস্তার বিলের ১০ টাকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ক্যাশের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। যা নিয়ে পরবর্তীতে ওই মিষ্টির দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে সৌরভ ঢালীর হাতাহাতি মারামারি হয়। মারামারির সময় সৌরভ তার দাড়িতে আঘাত প্রাপ্ত হন।
এ ঘটনার পর স্থানীয় কিছু লোকজন তৌহিদী জনতার নামে দাড়ি ছিড়ে ফেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সৌরভের হয়ে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আর এসময় এসআই রেজাউলসহ দুজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরে দোকান কর্মচারীরা নদী বন্দরের সামনের সড়ক অবরোধ এবং পরবর্তীতে মিছিল নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে।
লঞ্চ ঘাটের হাজী মোহাম্মদ মহসীন মার্কেটের কর্মচারী সৌরভ ঢালী বরেণ, প্রতিদিনই ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে নাস্তা করি আমি। যেখানে প্রতিদিন ৩০ টাকা দিয়ে নাস্তা করি, সর্বশেষ গতকালও ৩০ টাকায় যে নাস্তা খেয়েছি আজ সেই নাস্তার বিল চায় ৪০ টাকা। তখন ক্যাশে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতেই কর্মচারীরা এসে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে এবং আমার ওপর একপর্যায়ে হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমার দাড়ি ধরে টান দিলে কিছু অংশ ছিড়ে যায়।
ওমর ফারুখ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, একজন নামাজি ছেলের ওপর হামলা করে দাড়ি ছিড়ে ফেলার ঘটনায় ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা সবাই এর বিচার দাবি করছি।
এদিকে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ভবতোষ ঘোষ ভানু বলেন, নাস্তার বিল ৪০ টাকা আমাদের তালিকায় লেখা আছে। তবে ওই ছেলে মিথ্যা কথা বলে আমাদের ৩০ টাকা বিল দিতে চায়। এই নিয়ে ওই ছেলে খারাপ ব্যবহার করে আমার স্টাফদের সঙ্গে। এ নিয়ে মারামারি হয়েছে, তবে তার দাড়ি ছেড়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিজের দোষ ঢাকতে ওই যুবকই এরকম কথা ছড়িয়েছে। স্থানীয়রাও বিষয়টি যাচাই না করেই ক্ষুব্ধ হয়ে যান।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম বলেন, হোটেলে খেতে যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে। পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে এবং যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা নিতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আর আমরা এ বিষয়ে আইনগত সহায়তাও দিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনায় আমরা একজনকে হেফাজতে নিয়েছি, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং সারা বরিশালে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি যাতে সুন্দরভাবে থাকে সেই কাজে সবাই আমাদের সহায়তা করছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দোকানের কর্মচারিদের উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। আমরা এখনো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এই বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।