বরিশালে হঠাৎ বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বর, ২ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ৫ রোগী

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

চলতি মাসে বরিশালে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। বিশেষ করে শহরের দক্ষিন আলেকান্দা, আমানতগঞ্জ, পলাশপুর, রসুলপুর, সদর উপজেলার চরমোনাই, পিরোজপুর, ঝালকাঠীর গ্রামাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নেই। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। এটাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বরিশালে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকে। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। ঘনঘন বৃষ্টিপাতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা বংশ বিস্তার করে থাকে। শীত আসার আগ পর্যন্ত এই জ্বরের প্রাদুর্ভাব থাকবে। শীতকালে এডিস মশা তেমন একটা বংশ বিস্তার করে না। এ কারণে শীত মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরে তেমন কেউ আক্রান্ত হয় না।

চলতি মাসের ৭ ও ৯ জুলাই শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হলেও কেউ মারা যায়নি। এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ছড়ায়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস আছে। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। এবার সবচেয়ে ঝুঁকি বেশি হেমোরেজিক হলেও বরিশালে তা দেখা মেলেনি। সঠিক চিকিত্সা পদ্ধতি গ্রহণ করা না হলে হেমোরেজিক-এ মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে।

বরিশাল নগরের দক্ষিন আলেকান্দা এলাকার আয়শা সিদ্দিকা মিম(২৩),বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের শ্রাবন্তী(১৫),ঝালকাঠী রামপুরা গ্রামের মেহেদী হাসান(২৯),পিরোজপুর নেছারাবাদ আউরিয়া গ্রামের মিরাজ(২৫) ও ইমা আক্তার(১৯) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। চারজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মেহেদী হাসানকে ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরে উন্নত চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে এবার চিকুনগুনিয়ার তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। কারণ কারো একবার চিকুনগুনিয়া হলে দ্বিতীয়বার আর হয় না।

গত বছর ব্যাপক হারে চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। তবে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু হয় একই মশার কামড়ে।

তবে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দীপঙ্কর জানান,‘ চিকিৎসাধীন রোগীদের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই’। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে,সঠিকভাবে চিকিত্সা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়।

যদিও বলা হয় যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকে মৃত্যুর হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে এই হার ১ শতাংশেরও কম। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক চিকিত্সকও মনে করেন যে রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ঝুকিপূর্ণ সময়। এ সময়টাতে সবারই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু জ্বর থেকে রেহাই পেতে হলে বাসা বাড়িতে জমাট পানি রাখা যাবে না। বাসন-কোসন, ঘরের ভিতরে এসি, ফ্রিজের পানি যাতে জমাট না থাকে। কারণ জমাট বাধা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। দিনে ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। কারণ এডিস মশা দিনে কামড়ায়, রাতে কামড়ায় না। শুধু প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি সেবন করতে হবে। অবস্থা খারাপ হলে কিংবা অন্য কোন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খেতে হবে।

অভিযোগ উঠেছে, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম বরিশালে তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে এ ধরনের অভিযোগ প্রতিদিনই টেলিফোন করে আজকের বার্তাকে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোধে নগরবাসীকে সচেতন থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, যেমন টাইফয়েড ফিভার বা অন্য কোনো ইনফেকশন, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিত্সক প্রয়োজন মনে করলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন জানান,‘এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।তবে হেমোরেজিকের সংখ্যা নেই। ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন ডেঙ্গু রোগীদের শনাক্ত করতে হাসপাতালে অত্যাধুনিক মেশিনও রয়েছে’।