বরিশালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩ দস্যুবাহিনীর ৩৮ সদস্যের আত্মসমর্পণ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

মোঃ শাহাজাদা হিরা.

মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি দুপুর পৌনে ৪ টায় বরিশাল নগরের রূপাতলীর র্যা ব -৮ এর সদর দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে এ সুন্দরবনের তিন দস্যুবাহিনীর সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র্যা ব -৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজীবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন র্যা বের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এছাড়া আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে উপস্তিত ছিলেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, বরিশালের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এসএম রুহুল আমিন সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সোমবার ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে র্যা বের বিশেষ অভিযানে জলদস্যু ‘বড় ভাই’ বাহিনীর প্রধান মো. আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা, ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান মো. ফারুক মোড়ল ও সুমন বাহিনীর প্রধান মো. জামাল শরিফ সুমনসহ ৩৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণকারীরা সবাই খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। এদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি ৩৮ টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং সকল প্রকার অস্ত্রের ২ হাজার ৯৬৯ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৪ টি বিদেশি একনালা ও ৯ টি দোনালা বন্দুক, ৩ টি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশি রাইফেল, ৬ টি বিদেশি এয়ারগান, ৫ টি পাইপগান ও ১ টি বিদেশি কাটা রাইফেল রয়েছে।

প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি, দস্যু, সন্ত্রাসীদের কোন স্থান হবে না। আমরা সুন্দরবনাঞ্চলে নিরাপদ রাখার জন্য আরো ৪টি র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। দেশের মানুষ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদ ও শান্তি থাকতে পারে সেই লক্ষে কাজ করছি। যেসব জলদস্যু এখনো সুন্দরবনে বিরাজ করছে তাদের আত্মসমাপর্ণ করার জন্য বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ইতিমধ্যে সরকার আত্মসমাপর্ণকারী ১৩২ জন জলদস্যুকে আর্থিক সহায়তাসহ পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। এদের বেলায়ও তা করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন সংশোধনের সুযোগ মানুষের রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যা ব-৮ এর উপ পরিচালক মেজর সোহেল রানা প্রিন্স বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ‘বড় ভাই, ভাই ভাই ও সুমন’ বাহিনী সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মংলা, শ্যালাগাং, হারবাড়িয়া, ভদ্রা, পশুর নদী এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী।

সুন্দরবন অঞ্চলের বনজীবী ও জলজীবী সাধারণ মানুষ তাদের টার্গেট ছিলো। ১৯৯৫ সালে ‘বড়ভাই’ বাহিনী ও ২০০৮ সাল থেকে ‘ভাইভাই’ বাহিনী ও ২০১০ সালে ‘সুমন’ বাহিনী সুন্দরবনে জলদস্যুবৃত্তি করছিলো। ‘বড়ভাই’ বাহিনীর অলিয়ার শেখ (৫০), বরকত আলী শেখ (৫০), রেজাউল মোল্লা (৪৫), রিপন শেখ (৩১), খালিদ ইজারাদার (৪০), মিকাইল ইজারাদার (৩১), বাচ্চু শেখ (৩৫), মাহামুদ হাসান (২৩), মোঃ রফিকুল ইসলাম (৪২), ওলি ইজারাদার (৩১), গোলাম মাওলা (৫০), বায়েজিদ মোল্লা (৩৪), লিটন আলী ইজারাদার (৩১), মাজেদ ইজারাদার (৫০),আব্দুল মজিদ ভাঙ্গী (৫৫), এসএম মেহেদি হাসান মিলন (৩১), ইউনুস আলীসহ (৩২) মোট ১৮ সদস্য।

‘ভাই ভাই’ বাহিনীর রেজাউল সানা (৫০), অনিমেষ বাড়ৈ (২৪), ইমদাদুল হক (২৮), আলমগীর হাওলাদার (৩২), কুতুব উদ্দিন গাজী (৩০), হাবিবুর রহমান সিকদারসহ (৩২), আলামিন হাওলাদার (৩০), মোট ৮ সদস্য। ‘সুমন’ বাহিনীর আলামিন মৃধা (৪০), জামাল তালুকদার (৩৫), রাজা ফরাজি (২৫), মোঃ রফিকুল (৪১), কাইয়ুম জোমাদ্দার (২৯), আকরাম হোসেন গাজী (৩১), জুয়েল রানা (৩০), আলামিন খাঁ (২৫), আবুল কালাম শেখ (৬০), মিলন হাওলাদার (২২), ছমির তালুকদারসহ (৪৫) মোট ১২ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। ২১ মাসে ছোট-বড় মিলে মোট ১৭ জলদস্যু বাহিনী র্যা ব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করলো।