শামীম আহমেদ : সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন (ভুয়া) পরিচয় দিয়ে শ্বশুড়ের সহযোগীতায় গ্রামের বেকার-যুবকদের চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারনার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বরিশাল জেলার গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রতারনার প্রধান সহযোগী শ্বশুড় রকিব বেপারীকে আটক করেছেন।
রবিবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগের বরাত দিয়ে থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, গৌরনদী পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রকিব বেপারী ও তার মেয়ে জামাতা (সেনাবাহিনীর ভুয়া ক্যাপ্টেন পরিচয়দানকারী) কবির হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রামের বেকার-যুবকদের সেনাবাহিনীর বিভিন্নপদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর ভ‚য়া ক্যাপ্টেন পরিচয় দেয়া অভিযুক্ত কবির হোসেন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার ছোট দিঘাটি গ্রামের বাসিন্দা। গত তিনদিন আগে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা পুলিশ তাকে (কবির) আটক করেছে।
গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের অভিযানে আটক রকিব বেপারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি (ওসি-তদন্ত) উল্লেখ করেন। সরেজমিনে গৌরনদীর উপজেলার টরকী চর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, রকিব বেপারী তার ছোট মেয়ের জামাতা কবির হোসেনকে এলাকাবাসীর কাছে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এমনকি সেনাবাহিনীর পোশাক পরে কবির হোসেন তার শ্বশুড়ালয়ে একাধিকবার এসেছেন।
তিনি আরও জানান, তার ছেলে ওসমান মোল্লাকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রকিব বেপারী ও তার মেয়ে জামাতা কবির হোসেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তীতে ওসমান মোল্লার চাকরি হয়েছে মর্মে সেনাবাহিনীর একটি পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়।
একই এলাকার বাসিন্দা দলিল উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র সজিব হাওলাদার জানান, ছয় মাস আগে তাকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন রকিব ও তার মেয়ে জামাতা কবির। তাকেও সেনাবাহিনীর একটি পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার চরফতে বাহাদুরপুর গ্রামের মাহমুদ হোসেন জানান, তাকেও চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক শ্বশুড় ও তার মেয়ে জামাতা। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র দিয়ে ঢাকায় নিয়ে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের দারোয়ানের চাকরি দেয়া হয়।
এতে তিনি আপত্তি জানানোর পর তাকে কবির হোসেন তার বাসায় নিয়ে আটক করে রাখেন। মাহমুদ হোসেন আরও জানান, কবিরের বাসা থেকে তিনি ৭০জন চাকরি প্রত্যাশীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করেছেন। এমনকি কবির হোসেনের বাসায় কয়েক কোটি টাকাও তিনি দেখেছেন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, গত তিনদিন পূর্বে লৌহজং থানা পুলিশের হাতে কবির হোসেন আটক হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তারা ওই থানায় গিয়ে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এরপর থেকেই তারা প্রতারনার ফাঁদে পরার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
এ ঘটনার পর শনিবার (২১ মে) গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনীর ভ‚য়া ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া ও প্রতারনার প্রধান সহযোগী কবির হোসেনের শ্বশুড় রকিব বেপারীকে আটক করেছেন।
শ্বশুড় ও জামাতার প্রতারণায় চাকরির ফাঁদে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পরা পরিবারগুলো এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি তাদের সমূদয় টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।