বরিশালে সাংবাদিক মুনির হোসেনের কবর জিয়ারত করলেন তার পরিবার

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

২৫ নভেম্বর বরিশাল প্রেসক্লাব (বর্তমানে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল (প্রেসক্লাব) ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মুনির হোসেনের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

 

এ উপলক্ষে তার কবর জিয়ারত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। মরহুম সাংবাদিক মুনির হোসেন এর পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক ভাবে কোরআন খতম, দোয়া মোনাজাত করা হয়।

 

 

উল্লেখ্য যে, বহুগুনে গুনান্বিত এই মানুষটি ২০০৬ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর পরিবার ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।

 

 

জীবদ্দশায় তিনি একাধারে যেমন রাজপথে থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির কথা বলেছেন, তেমনি কাগজের পাতায় নানা প্রতিবেদন লিখে হয়ে উঠেছিলেন একজন সাহসি সাংবাদিক।

 

 

আবার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ মুনির হোসেন বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও দাপুটে পদচারনা করে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন।

 

 

অ্যাডভোকেট নেহাল হোসেন ও খালেদা বেগমের পুত্র মুনির হোসেনের জন্ম ১৯৬৩ সালের আগস্ট মাসে। ছাত্রাবস্থায় নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করা মুনির হোসেন বরিশাল নগরীর ব্রজমোহন বিদ্যালয় (বিএম.স্কুল) থেকে এসএসসি এবং ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

তারপর যেখানেই তিনি নিজেকে যুক্ত করেছেন সেখানেই পেয়েছেন সুনাম ও খ্যাতি। তাঁর নেতৃত্বের গুনাবলী তাঁকে অল্প সময়ে নেতৃত্বের আসনে বসাতে সাহায্য করেছিল।

 

মুনির হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের একজন সৈনিক হিসেবে রাজপথে লড়াই সংগ্রামে সবসময় ছিলেন সামনের কাতারে।

 

কোন অপশক্তির কাছে মাথানত না করে মুনির হোসেন আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচালিক করে গেছেন। বরিশালে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে এ সংগঠনের কর্মী সমর্থক বাড়াতে কাজ করেছেন আমৃত্যু পর্যন্ত।

 

 

নগরীর অশ্বিনী কুমার হল অথবা বিবির পুকুরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভরাট কন্ঠের অধিকারী মুনির হোসেন যখন বক্তব্য রাখতেন তখন শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকৃষ্ট হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতেন।

 

বরিশালের অন্যতম নাট্য সংগঠন শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে যুক্ত থাকা মুনির হোসেন আবৃত্তি আর সঞ্চালক হিসেবে স্বল্প সময়েই সকলের নজর কেড়ে ছিলেন।

 

 

১৯৯৩ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে মুনির হোসেন বরিশালের ২৭টি জোটের সমন্বয়ে গঠিত বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত নব্বইয়ের দশকে মুনির হোসেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ হিসেবে রাজপথে সরব ছিলেন সকল অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৯২ সালে মুনির হোসেনের সম্পাদনায় ‘ইতিবৃত্ত’ নামে একটি সাহসী ম্যাগাজিন বের হয়।

 

একটা সময় এ পত্রিকাটি বরিশালবাসীর আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়ে সকলের নজর কেড়েছিলেন। ত্যাগ, তিতিক্ষা আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে গিয়ে একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক অথবা একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া মুনির হোসেন সাংবাদিক নেতা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন বরিশালের বহুল প্রচারিত স্থানীয় দৈনিক আজকের বার্তার বার্তা সম্পাদক।

 

এক সময়ে বরিশালের বাইরে থেকে যখন একেএম মুস্তাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় দৈনিক প্রবাসী প্রকাশিত হতো তখন মুনির হোসেন সেই পত্রিকার বরিশাল সংবাদদাতা ছিলেন।

 

 

তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের বরিশাল সংবাদদাতা ও জাতীয় দৈনিক জনকন্ঠের বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন। নেতৃত্বের গুনে তিনি একাধারে ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০১ সালে বরিশাল প্রেসক্লাবের (বর্তমানে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

 

স্পষ্টবাদী মুনির হোসেন ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। তিনি নিজে যেমনি স্বপ্ন দেখতেন তেমনি তার কাছে থাকা মানুষ গুলোকেও স্বপ্ন দেখাতেন।

 

 

১৯৯৬ সালে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন মুনির হোসেন ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বরিশাল জেলা সভাপতি। ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতৃত্ব পর্যায়ের নেতা হয়েও মুনির হোসেন স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়ে দেননি।

 

 

বরং তিনি তার পেশাকে সম্মান জানিয়ে ওই সময়ে একজন পুরোদস্ত সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুনির হোসেন ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর হঠাৎ করে সকলকে কাঁদিয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান।