জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায় তার সনদে জন্মতারিখ পরিবর্তণ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের তদন্তে এই জালিয়াতির বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। কেন তার বিরুদ্ধে এই ঘৃন্য অপরাধের জন্য চাকুরী থেকে বরখাস্ত কিংবা শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না এ জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল এ শোকজ নোটিশটি স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন। গতকাল এই চিঠিটি বরিশালে পৌছুলে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে ‘সপ্তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৭ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সচীন কুমার রায়। তখনকার নথিতে সচীন কুমারের জন্মতারিখ ১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। চাকরিতে যোগদানের ২৭ বছর পর ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি ও পদায়নের সময় তাঁর বয়স পরিবর্তন করে ১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি চাকরিতে এফিডেভিট (বয়স কমানোর দালিলিক প্রমাণ) গ্রহণযোগ্য নয়। সিভিল সার্ভিস রুলের বিধি-৯ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা তাঁর বয়স সংশোধন করতে পারেন না।’
অভিযোগ উঠে জালিয়াতি করে দুই বছর বয়স কমিয়ে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন বরিশালের সরকারি হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সচীন কুমার রায়। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে মাউশি। মাউশি ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ, মাউশির উপপরিচালক মেজবাহ উদ্দিন সরকার ও এইচআরএম ইউনিটের সহকারী পরিচালক আশেকুল হককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহণের পাশাপাশি সরেজমিন যশোর শিক্ষা বোর্ড ও বরিশালে তাঁর চাকরিস্থল গুলোতে এসে তদন্ত করেন। তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে।
জন্মতারিখ সংশোধনের কথা স্বীকার করলেও জালিয়াতির বিষয়টি মানতে নারাজ অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায়। হাতেম আলী কলেজের এই অধ্যক্ষ বলেন, সব নিয়ম মেনেই বয়স সংশোধন করেছেন।
কিন্তু তার এই যুক্তি মানেনি তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন মহাপরিচালকের কাছে প্রদান করে এই শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যের (পিডিএস) ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন যাবার পরপরই নড়েচড়ে বসেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। একটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ এমন কাজ করতে পারেন তা অনেকেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক তাকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়।
গত ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়েনর সচিবমোঃ সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত চিঠিটি গতকাল সোমবার বরিশালে আসে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- তদন্তে বয়স জালিয়াতির বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। যা সরকারী চাকুরী ও আচরণ বিধির পরিপন্থি এবং সরকারী চাকুরি বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩বি ও ৩ ডি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারা অনুয়ায়ী অসদাচারণ ও দুর্নীতির অভিযোগ অভিযুক্ত করা হল। এবং কের চাকুরী হতে বরখাস্থ করা হবে না বা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না এর কারণ আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর সচীন কুমার রায় সরকারী লসয়দ হাতেম আলি কলেজে অধক্ষ্য হিসাবে যোগদান করেন।