বরিশালে সরকারী বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ

:
: ৪ years ago

সরকা‌রি ব‌রিশাল ক‌লে‌জের নাম পরিবর্তন করে সেখানে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ নাম যুক্ত করার প‌ক্ষে বিপ‌ক্ষে বি‌ক্ষোভ ও গণসাক্ষর কর্মসূচী হ‌য়ে‌ছে। গনস্বাক্ষর কর্মসূচী ও বিক্ষোভের কারনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃ‌ষ্টি হয়।

বুধবার সকালে নগরীর অ‌শ্বিনী কুমার হ‌লের সাম‌নে বাংলা‌দেশ সমাজতা‌ন্ত্রিক দল-বাসদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন ও সরকা‌রি ব‌রিশাল ক‌লে‌জের বর্তমান ও সা‌বেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচী পালন ক‌রে। এসময় উভয়পক্ষ পাল্টাপা‌ল্টি শ্লোগান দি‌য়ে বি‌ক্ষোভ কর‌লে উত্তপ্ত প‌রি‌স্থি‌তির সৃ‌ষ্টি হয়।

প‌রি‌স্থি‌তি সামাল দি‌তে পু‌লিশ মোতায়‌ন করা হয়। সকাল ১১টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশাল ক‌লে‌জের বর্তমান ও সা‌বেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গনস্বাক্ষর কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর। বরিশাল কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে করা গনস্বাক্ষর কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা তাদের দাবি তুলে ধরে বলেন, অ‌শ্বিনী কুমারের স্বজনরা বা‌ড়ি‌টি বি‌ক্রি ক‌রে। প‌রে সেখা‌নে ব‌রিশাল ক‌লেজ স্থাপন করা হয়। বিভাগীয় শহর হিসা‌বে ক‌লে‌জের নাম ব‌রিশাল ক‌লেজ রাখাই যু‌ক্তিযুক্ত বলে দাবী তাদের। এসময় বক্তব্য রাখেন, যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর র‌ফিকুল ইসলাম খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হাসান মাহমুদ বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান প্রমূখ।

অপরদিকে গনস্বাক্ষর কর্মসূচী শুরু হওয়ার পর নগরের ফরিকরবাড়ী রোডস্থ বাসদ বরিশাল জেলা কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের রাস্তার অপরপ্রান্তে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। এসময় তাদের সাথে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, শহীদ আলতাব মাহমুদ স্মৃতি সংসদ, শিশু কিশোর মেলা বরিশাল জেলা শাখা এবং বরিশাল রিক্সা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিক্ষোবে অংশ নেয়।

এসময় বাসদ নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার বিস্তারে মহাত্মা অ‌শ্বিনী কুমারের অবদান অনস্বীকার্য। মহাত্মার বসত ভিটাটাই এখন বরিশাল ক‌লেজ। অথচ সে‌খা‌নে তার কোন নাম নেই। ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার সরকারি কলেজ, বরিশাল’ নামে করার গেজেট নোটিফিকেশন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। একই সাথে কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে মিউজিয়াম ও ভাস্কর্য করার দাবি জানান তারা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দাড়িয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুস নিজে সংসদে দাড়িয়ে বরিশাল কলেজের নাম অশ্বিনী কুমার কলেজ করার দাবি তুলে ধরেছিলেন। আজ যখন সেটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে তখন আওয়ামীলীগই এর বিরোধিতা করছে।

বাসদের আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী, বাসদ মার্কসবাদী আহবায়ক সাইদুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক সাগর দাস প্রমূখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত শুধু বরিশালের প্রাণপুরুষই নয়, পুরো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই উপমহাদেশে অগ্রগামী ভূমিকার পেছনে নক্ষত্রের মত ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত। বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আকর্ষণীয় আইন পেশা ছেড়ে মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে গেছেন, পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রজমোহন স্কুল (১৮৮৪) ও ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯)। দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করে নিয়েছিল। তাঁর তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত হয়েছিল। বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অবিস্মরনীয় হয়ে আছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আজকের বরিশাল কলেজ ছিল অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন। এই বাসভবনের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল। তিনি অর্জন করেছিলেন মহাত্মা খেতাব। দেশভাগের পরে তাঁর উত্তরাধিকারীগণ দেশত্যাগে বাধ্য হলেও, তাঁর বাসভবনে গড়ে ওঠে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বরিশাল নাইট কলেজ। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে ক্রমশ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কলেজটি সরকারীকরণের পরে ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’ নামে স্বীকৃত হয়। বরিশালের প্রগতিশীল মানুষজনের প্রতিবাদের পরেও তার বাসভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অশ্বিনী কুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় কিছুই নেই। তাই অবিলম্বে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নামে করার প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি জানিয়েছেন বাসদ নেতৃবৃন্দ।