এম.এস.আই লিমনঃ সরকারি দুগ্ধ খামারের দুধে জ্বল না মেশালেও ছলচাতুরী করার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।নগরীর দুগ্ধ খামারের ১৯০ টি শংকর প্রজাতির গরুর মধ্যে ৩৮ টি থেকে প্রতিদিন ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে তা ৫০ টাকা প্রতি লিটার দরে বিক্রি করছে ভোক্তাদের কাছে। আর বিক্রি হওয়া প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধের টাকা ৩/৪ দিন অন্ত অন্ত ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করে আসছে তারা।প্রতি বছর সরকারি দুগ্ধ খামারের উৎপাদন কৃত দুধ বিক্রি করে আয় হচ্ছে ৪০/৫০ লক্ষ টাকা।
নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডে সরকারি দুগ্ধ খামার ৫০ একর জমিতে পশু লালন পালনের যাবতীয় সর্বসাকুল্যের ব্যায় বাবদ প্রতি বছর ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার৷গত মাসে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে দুধ বিক্রিত ৬ লাখ টাকা কয়েক ধাপে জমা করা হয়েছে বলে জানান সরকারি দুগ্ধ খামারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুকান্ত কর। তিনি এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কম খরচে এ বিভাগের উদ্যোক্তা খামারিদের বৈজ্ঞানিক ফার্ম তৈরী করার জন্য খামার তৈরীর জন্য সকল ধরনের তথ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করার সরকারি প্রদর্শনী ফার্ম হিসেবেই মূলত সরকার এ দুগ্ধ খামার প্রকল্প চালু করেছে। এর ন্যায় পশু লালন পালন এবং খাদ্যের চাহিদা পুরনের সকল সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে আসছে তারা।
সরকারি দুগ্ধ খামারটি মূলত সরকারি প্রদর্শনী ফার্ম। খামারে থাকা ৩৮ টি গরু থেকে প্রতি দিন ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয় আর এ দুধ সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা লিটার দরে জনসাধারনের কাছে বিক্রি করে তা দু তিন অন্ত অন্ত ব্যাংক চালানের মাধমে জমা দেয়া হয়ে আসছে। একাধিক খামারিদের সাথে আলাপ করলে জানা গেছে শংকর প্রজাতির গরু প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১০ লিটার করে এবং সর্বোচ্চ ১৭ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। এমন তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে সরকারি দুগ্ধ খামারের কৃষিবিদ সুকান্ত কর কে পুনরায় জানতে চাওয়া হলে তিনি জানায় ৭ লিটার এবং সর্বোচ্চ ১৭ লিটার প্রতিদিন দুধ দিয়ে থাকে একেকটি শংকর জাতের গাভী। এর বিপরীতে তার দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩৮ টি এ প্রজাতির গরু থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদিত হওয়ার হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি খোলসা করে জানাতে বললে তিনি নানসন প্রসঙ্গের কথায় বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
সর্বশেষে তিনি জানায় অনেক গরু প্রতিদিন এক/দেড় লিটার করেও দুধ দিচ্ছে তাদের ফার্মের গড়ে ৩৮ টি গরু থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে বলেও জানান৷ এদিকে সরকারি দুগ্ধ খামারের এক কর্মচারি নাম না প্রকাশের শর্তে দপশ জনপদের প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিদিন গড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ লিটার গরুর দুধ উৎপাদিত হয় এ খামারে। ফার্মের সামনে ২শ লিটার সরকার নির্ধারিত মূল্য ধরে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিক্রি দেখানো হলেও দুধ ব্যবসায়ীদের বাকী দুধ বিক্রি করে দুগ্ধ খামারের কতিপয় কর্মকর্তারা সে অর্থ প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে বন্ঠনকরে নিচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক জনতা এ ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেন,তদারকির অভাবে নিত্যদিন চলছে এ দুধ চুরির মহাউৎসব।উৎপাদন দেখানো দুধের পরিমান বাস্তবের সাথের গড়মিলে নগরীর দুগ্ধ খামারের দুর্ণীতি ক্রমশই মহামারী আকারে বিস্তার করে সরকারকে লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব বঞ্চিত করে আসছে অসাধু কতিপয়দের এহেন কান্ডে। সূত্রমতে,১৯৯৫ সালে নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডে গবাধী পশু প্রজনন ও দুগ্ধ খামার শুরু হয় ৫০ একর জমির উপর। এতে ৪ একর হাসের খামার,৫ একর ছাগল,৫ একর জমি বুল্ড স্টেশন করার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ টি সেটের গরু পালন করার ৩ টি বিকল পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।
দুগ্ধ খামারের অফিস সুত্রে জানা গেছে, ৩৮ টি গরু থেকে উৎপাদিত দুই বেলায় ২৫০ লিটার দুধ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিক্রি করে দুই তিন দিন পর পর ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করলেও অভিযোগ রয়েছে, খামারটিতে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।গরুর লালন পালনের জন্য ৫০ জন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। ৩৮ টি গরু থেকে দুধ উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানালেও অভিযোগ রয়েছে ৪৫/৫০ টি গরু প্রতিদিন ১৭/২০ লিটার করে দুধ উৎপাদন করছে।
প্রতিদিন প্রায় শত লিটার দুধ কালোবাজারের মাধ্যমে বাজার জাত করে আসলেও কোন ধরনের তদারকি না থাকায় সংশ্লিষ্টদের প্রতিদিনকার এ জমজমাট ব্যবসার লাগামহীন হয়ে বেপরোয়া ভাবে চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছে আউটসোর্সিং এ কাজ করা কতিপয় শ্রমিকরা। নাম না প্রকাশের শর্তে অপর এক কর্মচারী জানান, সরকারী পদ ৫২ জন থাকলেও কর্মরত রয়েছে ৩৭ জন। তবে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে আরো ১০/১৫ জন রয়েছে।এদের মধ্যে কয়েক কর্মকর্তার সাথে গোপন সক্ষতায় প্রতিদিন দুধ কালোবাজারে বিক্রি গরু পালন এবং খাবারের ভূয়া ভাউচার করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসার বিষয়গুলোও জানায় তারা।
এদিকে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রদর্শনী ফার্মে কম খরচে বৈজ্ঞানিক ফার্ম খামার করতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কৃষিবিদ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিলেও সে বিষয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই তাদের। গড়ে প্রতি মাসে খামারী উদ্যোক্তা ৩০/৪০ জন আসছে।সরেজমিন অনুসন্ধান সূত্রে অভিযোগের বিষয়ের সকল দূর্নীতি র থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে দেশজনপদের অনুসন্ধানে। উপরস্থ দুধ চুরি এবং সরকারের রাজস্ব কম জমা করে মোটা অংকের অর্থ লুটেপুটে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন সরকারি দুগ্ধখামারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কৃষিবীদ সুকান্তকর।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com