বরিশালে সংস্কৃতি কর্মীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

:
: ১ বছর আগে

বরিশালে নাট্য সংগঠনের পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটার কার্যালয় ভাঙ্গার প্রতিবাদে নগরীর রাজপথে নেমেছে বরিশালে সংস্কৃতি কর্মীরা। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সাতটি সাংস্কৃতিক জোট মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল করে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের কার্যালয় তাদের কে ফেরত না দিলে বৃহত্তর কর্মসূচী দেয়া হবে।

বক্তারা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে কিভাবে একটি নাট্য সংগঠনের কার্যালয় ভেঙ্গে ফেলা হয়? সংস্কৃতি কর্মীরা যে কাজ করেন তা দেশের আইন শৃঙ্খলাকে বজায় রাখার পাশাপাশি বিশেষ করে জঙ্গীবাদ দমনে সহায়ক। কিন্তু জেলা পুলিশ কোন আইন না মেনে, বা কোন আলোচনা ছাড়াই পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটার ভেংগে ফেলেছে কার স্বার্থে? তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত নগরীর রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ব্যক্ত করেন বক্তারা।

পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটারের সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, গত ৪০ বছর ধরে নগরীর বিউটি রোড সংলগ্ন পুরোনো একটি ভবনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ আজিজের মৌখিক অনুমতি নিয়ে ১৯৮৪ সাল থেকে নাট্য সংগঠন পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটার এর কার্যক্রম চলে আসছিল। একই ভবনের পাশের কক্ষে জেলা পুলিশের আওতাধীন কোর্ট পুলিশের সদস্যরা থাকত।

ভবনটি জরাজীর্ন হয়ে যাওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে সংস্কারের নামে সংগঠনের কার্যক্রমের স্থান (পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটার) উচ্ছেদ করে দেয়। সংগঠনের সকল সদস্যর অগোচরে হঠাৎ গত ২৮ নভেম্বর ভেংগে ফেলা মাত্রই মুহূর্তের মধ্যে সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিবাদ জানায় । প্রাথমিক আলোচনায় কার্যালয়টি সংস্কারের পর দেয়ার আশ্বাস দিলেও এখনও না দেয়ায় সংস্কৃতি কর্মীরা নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলনে নেমেছে।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ জানান, আমরা বারবার এই সমস্যা নিরসনের কথা বললেও তারা কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। আমরা মনে করি জেলা পুলিশ প্রশাসন যেভাবে কার্যালয়টি ভেংগে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে তা সংস্কৃতির উপর আঘাত।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী জানান, আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না । অবিলম্বে ২১ ফ্রেবুয়ারির মধ্যে পঞ্চসিড়ি গ্রুপ থিয়েটারকে তাদের কার্যালয় ফিরিয়ে দিতে হবে। নয়ত বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এখানে অনেক আগে থেকেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য বসবাস করে আসছিল। এখানে একটি পুলিশী ব্যারাকের জন্য কার্যালয়টি সংস্কার হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের কাছে আমরা অনুমতি নিয়েই এখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ওই সংগঠনের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই তারপরেও কিন্তু বলিনি সংগঠনকে কার্যালয় দেয়া হবে না।

এদিকে বিক্ষুব্ধ সংস্কৃতি কর্মিরা জানান, মুখে তারা এই নাট্য সংগঠনের জন্য স্পেস দেয়ার কথা বললেও পুরো এলাকা দেয়াল দিয়ে ঘিরে কোর্ট পুলিশ ব্যারাক লিখে রেখেছে। সেখানে কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না। আমাদের আসবাবপত্র, আলমারি, হারমোনিয়াম ভাঙ্গা অবস্থায় পরে রয়েছে। এর ফলে আমরা মনে করি ওখান থেকে আমাদের কে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস জানান, গণপূর্ত বিভাগ এখানে পুলিশী ব্যারাকের জন্য কাউকেই কোন অনুমতি দেয়নি। কোন সম্পত্তি থেকে কাউকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হয়। সর্বপ্রথম নোটিশ দিতে হবে।

এদিকে কার্যালয় উচ্ছেদ নিয়ে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল সদর রোড হয়ে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এসে শেষ হয়।

উক্ত মানববন্ধনে অনান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, বরিশাল শাখার সভাপতি কাজল ঘোষ, আবৃত্তি সংগঠন সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সম্পাদক জাকির হোসেন, বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সুশান্ত ঘোষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রতিমা সরকার, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি স্বপন খন্দকার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সম্পাদক স্নেহাংশু কমার বিশ্বাস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সম্পাদিকা টুনু রানী কর্মকার প্রমুখ