বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে চলমান থ্রি-হুইলারে (মাহিন্দ্রা) ছাত্রীর হাত ধরে টান দেয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বর্জন ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবী বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসে আজ বুধবার (০৪ এপ্রিল) বেলা ১ টার দিকে এসব কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতা তন্ময় চক্রবর্তী। তিনি জানান, মঙ্গলবার (০৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৮ টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা গণপূর্ত বিভাগের সামনের সড়ক দিয়ে ৪৫ তম ব্যাচের এক ছাত্রী হোষ্টেলের দিকে যাচ্ছিলো। এসময় একটি চলমান থ্রি হুইলার (মাহিন্দ্রা) থেকে দুর্বৃত্তরা ওই ছাত্রীর সাথে থাকা ব্যাগ ধরে টান। সেটি নিতে ব্যর্থ হলে ছাত্রীর হাত ধরে টান দেয় দুর্বৃত্তরা। ছাত্রী ডাক-চিৎকার শুরু করলে তাকে ছেড়ে দিয়ে মাহিন্দ্রাটি নিয়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত সটকে পরে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে রাত ১২ টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা। এরপর শিক্ষার্থীর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছাত্রী হোষ্টেল কেন্দ্রিক সড়কে গেট নির্মান, সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ, পুরো ক্যাম্পাসের সবজায়গাতে পর্যাপ্ত লাইট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবী তোলেন। যে দাবী আদায়ে আজ সকাল থেকে কলেজের ৫ টি ব্যাটের সকল শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করে। ইব্রাহিম নামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জানান, মেডিকেল ক্যাম্পাসটি চারদিক থেকে খোলা থাকায় হরামেশা ছিনতাই ও ইভটিজিং এর মতো ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনা খুবউ দুঃখজনক ও আতঙ্কের হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাই আন্দোলনের ডাক দেয়। সকালে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবী আদায়ে স্লোগান দিতে শুরু করলে কলেজ অধ্যক্ষ ছাত্র প্রতিনিধি, শিক্ষক, হাসপাতাল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেন। শেবাচিম হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ নাহিদ হাসান জানান, শিক্ষার্থীদের এ সমস্যায় ডাক্তাররাও রয়েছেন। তাই তাদের কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। তবে কলেজ প্রশাসন বৈঠক করে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন। কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর সাহা বলেন,শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সবসময় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ছাত্রদের দাবীর পাশাপাশি শিক্ষক ও প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ছাত্রীদের নিরপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে দুটি গেট নির্মান করা হচ্ছে। যার একটি সেন্ট্রাল মসজিদের পাশে অপরটি গণপূর্তের বিদ্যুত অফিসের পাশে বসানো হবে। দিনের বেলা গেট দুটি সম্পূর্ণ খোলা রাখা হবে, তবে সন্ধ্যার পর থেকে গেট দুটি বন্ধ করে পকেট গেট খোলা রাখা হবে। আর গেটের নিরাপত্তার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য কিছু আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরাও বসানো হবে। এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) গোলাম রউফ খান জানান, কলেজ প্রশাসন নিজ থেকেই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগে নিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।