বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মনি আক্তার (৩০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার পরপরই দায়ী চিকিৎসকদের বিচার দাবি জানিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলে চিকিৎসকরাও উত্তেজিত পড়েন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওইসময় স্বজনরা চিকিৎসকদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
মৃত মনির পাঁচ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সবুজ হাওলাদারের স্ত্রী।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে শেবাচিম হাসপাতালের গাইনী বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃতের স্বামী সবুজ হাওলাদার জানান, তার স্ত্রী’র সন্তান প্রসবের নির্ধারিত তারিখ ছিলো মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। এজন্য প্রসব বেদনা শুরু হলে ওইদিন সকাল ৮টায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ভর্তি করান।
তিনি জানান, শুরু থেকেই তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তাই বারবারই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সিজারিয়ানের (ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অস্ত্রোপচার) জন্য বলেছি। কিন্তু তারা বাচ্চা ও তার মা উভয়ে সুস্থ আছে বলে সময়ক্ষেপণ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার বিকেলে প্রসূতি মনি আক্তার আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হই। কিন্তু তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া কাউকে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চারবার দ্রুত সিজারিয়ানের অনুরোধ জানাতে চিকিৎসকের রুমে যাই। কিন্তু তখনও কোনো সুরাহা পাইনি। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে অপারেশনের জন্য ব্লাড জোগাড় করতে বলেন। কিন্তু ব্লাড জোগাড় করার পরও মনিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন সবুজ হাওলাদার।
সর্বশেষ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মনি ও তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে গাইনী বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সুইটি সাংবাদিকদের জানান, এখানে চিকিৎসকদের অবহেলার কোনো কারণ নেই। কেননা মনি নামের রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। সিজারিয়ান করার মত অবস্থা ছিলো না তার। যে কারণে অপেক্ষা করা হচ্ছিলো। সিনিয়রদের পরামর্শ অনুযায়ী বুধবার সকালে তার সিজারিয়ানের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবী করেন ওই চিকিৎসক।
অপরদিকে চিকিসকের অবহেলায় প্রসূতি নারীর মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান বলেন, রোগীর স্বজনদের ব্লাড জোগাড় করতে বলা হয়েছিলো। তারা সময় মতো ব্লাড আনতে পারেনি। এ কারণে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ইউনুস মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর মৃত্যু নিয়ে একটু বিশৃঙ্খলা হয়। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হওয়ার আগেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়া আমি মৃতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। আমরা তদন্ত করে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”