বরিশালে শীতের আগমনে লেপ তোশক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

শামীম আহমেদ ॥ ছয় ঋতুর এই দেশে পৌষ ও মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও প্রকৃতিতে শীত হাজির হয় আরো আগে। তারিখের হিসাবে এখনও শীত আসেনি। কিন্তু গ্রাম থেকে নগর, সব জায়গায়ই চলছে শীতের আয়োজন। দখিণের মেঠোপথ এখন হালকা শিশির ভেজা ঘাসে, আমনের ক্ষেতে গেলে সকালের নরম রোদ। আবছা কুয়াশার জাল ঘেরা সকাল-সন্ধ্যার রহস্য। আর্দ্রতা হারাচ্ছে বাতাস, খসখসে হচ্ছে ত্বক। শুরু হয়েছে পাতা ঝড়ার দিন।

গ্রামে রাতে পুরো দস্তুর গায়ে কাঁথা জড়াতে হয় না বটে তবে শেষ রাতের শীতে কাঁথার উষ্ণতা খোঁজে সবাই। সন্ধ্যার পর হাত বাড়ালেই বরিশাল নগরীর ফুটপাতে ভাপা, পাটিসাপটাসহ শীতের নানা পিঠাপুলি পাওয়া যায়। আর শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে অনেক আগেই।

বাংলার ক্যালেন্ডারের হিসাবে এখন হেমন্ত। কার্তিকের শেষ সময়। শীতের ঋতু পৌষ ধরা দিতে ঢের দেরি।তবে দিনে গরম, রাতে ঠা-া আর সাত সকালে ঘাস, লতাপাতার ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দেয় ‘শীত এসে গেছে। তৈরি হও শীতবস্ত্র নিয়ে শীত মোকাবিলায়’। ফলে শীত নিবারনে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন। এতে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানে। যে কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগরদের।

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শীতের সময় উষ্ণতার আবেশ পেতে তুলার তৈরি লেপের প্রচলন বেশ আগে থেকেই। বছরের ৮ মাস অলস সময় পার করলেও শীতের চার মাস লেপ-তোষক কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লেপ তৈরির কাজ। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

সরেজমিনে দেখাগেছে, শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে যে যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। নগরীর পদ্মাবতী রোড, বাজার রোড, সাগরদী, চৌমাথা, নতুন বাজার,কাশিপুর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লেপ-তোশকের দোকানের সবকটিতেই ছিল কারিগরদের লেপ বানানোর ব্যস্ততা। দোকানিরাও অর্ডার গ্রহণ এবং ক্রেতাদের বিভিন্ন রঙ-মানের কাপড় ও তুলা দেখাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ দৃশ্য চলছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার গুলোতেও।

লেপ-তোশক তৈরি ধনুকর মোঃ ইউসুফ জানান, কিছুদিন পর ক্রেতাদের ভিড় আরো বাড়বে। ক্রেতাদের এ আনাগোনা চলবে পুরো শীত জুড়ে। শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, একটি লেপ বা তোশক তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে ১ ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে ৮ থেকে ১০টি লেপ বা তোশক তৈরির কাজ করে থাকেন।

পদ্মাবতী রোডের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, শীত মৌসুমে ৩ মাস কারিগররা লেপ-তোশক তৈরির কাজ পান। বছরের বাকি সময় তাদের এ কাজ থাকে না। তখন তারা অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকেন। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে। তুলার মান ও পরিমানের ওপর নির্ভর করে লেপ-তোশক তৈরির খরচ। এ বছর জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই লেপ-তোশক তৈরিতে খরচ ২’শ থেকে ৩’শ টাকা বেড়ে গেছে। আর একটি লেপ-তোশক বিক্রি করে তাদের ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা লাভ হয়।