বরিশালে শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাঠে নিরাপত্তাহীনতায় মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ক্রমশই অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীনতায় হয়ে পড়েছে বরিশাল শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত ও সেখাকার দুটি ডরমেটরি ভবন দখল করে নেওয়ায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দুটি ভবন দখল হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে শিশুদের আবাসন সুবিধা দিতেও পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলশ্রুতিতে শহরের রুপাতলীস্থ কেন্দ্রটি লাগোয়া বাইরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ৯৩ বালক শিশুর থাকার বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাম্প্রতিকালে এই বিষয়টি প্রকাশ পেলে সর্বমহলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার রসদ জোগায়। এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক দুটি ভবন দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই নির্দেশনার পরেও ভবন দুটি দখলমুক্ত করতে কোন উদ্যোগ নেয়নি সমাজসেবা।
এদিকে ভবন দুটিতে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের কারণে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১০০ মেয়ে শিক্ষার্থী।

এমতাবস্থায় খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- ওই দুটি ভবন দখল করে রয়েছেন বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরেরই বেশ কয়েকজন কর্মচারী। প্রতিষ্ঠানটি রুপাতলীর ওই কেন্দ্রে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানেই থাকছেন।

অবশ্য অভিযোগ রয়েছে বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালকের প্রাইভেটকার চালক কালাম ও রফিক সেখানে থাকার পাশপাশি বেশ কয়েকটি কক্ষ বহিরাগতদের কাছে ভাড়াও দিয়েছেন। মুলত সেই বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের কারণেই নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কেন্দ্রটির মুল ফটক খোলা রাখার কারণে উৎকণ্ঠায় থাকছে মেয়ে শিশুরা।

এমন পরিস্থিতিতে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- বরিশাল-ঝালকাঠি সড়কের পাশে অবস্থিত কেন্দ্রটি মুলফটকটি খোলা। ভেতরে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন বহিরাগত বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনেকে মোটরসাইকেলে জোরালো আওয়াজে হর্ন বাজিয়েও ভেতরে ঢুকছে। ফলে আতঙ্কে কেন্দ্রটির মেয়ে শিশুরা অনেকটা আবাসিক ভবনেই বন্দি হয়ে পড়েছেন। মাঠ থাকার পরেও মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না নিরাপত্তাহীনতায়।

সেখানকার একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি অবহিত করে জানিয়েছেন- বহিরাগতদের আগমনের কারণে তাদের সার্বক্ষণিক আতঙ্কে সময় পাড় করতে হচ্ছে। তাছাড়া বিকেল বেলাও বিনোদনের জন্য মাঠে নামতে পারছেন না। এই বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট অবগত থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শিশুদের।

এক্ষেত্রে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. অজিয়র রহমানের ভাষ্য হচ্ছে- বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমাজসেবার পরিচালককে ব্যবস্থা নিতে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু কি কারণে এখনও ভবন দখলমুক্ত করা গেল না সেই বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন। তবে তিনি শুনেছেন জেলা প্রশাসকের বরাতে সমাজসেবার উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে জেলা প্রশাসক বা সমাজসেবার নির্দেশনা উপেক্ষা করার সাহস বা শক্তি পেলেন কোথায় রফিক ও কালাম। অবশ্য এর উত্তরও অনেকাংশে পাওয়া যাচ্ছে এই দুই কর্মচারির সরল বয়ানে। তাদের ভাষায় সমাজসেবার উপ-পরিচালক আল মামুনই তাদের সেখানে থাকার ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করেছিলেন। ফলে আর বোঝার অপেক্ষা রাখে না যে বরিশাল শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির বর্তমান বাস্তবতা কি।

যদিও সমাজসেবার উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার এখন বলছেন- জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেয়ে ভবন দুটি দখলমুক্ত করতে নোটিশ করা হয়েছে। তবে কর্মচারিরা সেখান থেকে সরতে এক মাস সময় প্রার্থনা করেছে। যে কারণে ভবন দুটি ফিরে পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন- ভবন দুটি হাতে পাওয়া মাত্রই বাইরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত ৯৩ শিশুকে কেন্দ্রটির ভেতরে আবাসন সুবিধা দেয়া হবে।’’