শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৃশংস হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার কর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮) ফেব্রয়ারী সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর প্রাণ কেন্দ্র সদররেডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মহানগর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাখার সভাপতি সাগর দাশের সভাপতিতে এখানে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল সমাজতাত্রিক দল (বাসদ) সদস্য সচিব ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন সিফাত,মিল্লাত,অদিতি,লামিয়া সাইমুন, সাইফুল ইসলাম,সুজন সিকদার,প্রতিভা রায়,মোজাম্মেল হক সাগর ও শন্তু মিত্র প্রমুখ।
পরে তারা নগরীতে এক বিক্ষোভ মিছিল বেড় করে মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ফকির বাড়ি দলীয় কার্যলয়ে গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য রাতের আধারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এক যুক্ত বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল জেলার আহবায়ক সাগর দাস আকাশ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর শাখার আহবায়ক প্রতিভা রায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে তুচ্ছ কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ১৫ জন ছাত্র শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। একটি স্বাধীন দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর এহেন সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা জাতির জন্য লজ্জার।
নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান এবং আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
অপর এক যুক্ত বিবৃতিতে বাসদ বরিশাল জেলার আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন ও সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক নবীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম সাফিন এক যৌথ বিবৃতিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৬ ফেব্রয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সাথে বিআরটিসি বাস কন্টাক্টটারের বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে ও অন্যজনকে লাঞ্চিত করেন।
এই ঘটনার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে সকলে নিজ বাসস্থান ফিরে যায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষে বাসস্থানে ফিরে গেলে ১৭ ফেব্রয়ারী গভীর রাতে রুপাতলী বাসস্টান্ড সংলগ্ন সকল শিক্ষার্থীদের মেসে সংগঠিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা অতর্কিত হামলা চালায়।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, রাতে বরিশাল নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার সব মোড়ে মোড়ে সন্ত্রাসী বাহিনি টহল দিতে থাকেন৷
যার ফলে আহতদের তৎক্ষনাৎ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়নি এবং আহতদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি। রাতে ভিসি ও প্রক্টরের সাথে একাধিক বার শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যার্থ হয়েছে।
হামলা চলাকালীন সময়ে পুলিশ নিরব দর্শকের ভুমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নির্লিপ্ততা সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ মদদের সামিল। দ্রুত এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে।
সুষ্ঠ তদন্তও বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে ছাত্র ফেডারেশন সহ অপরাপর সকল শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র সংগঠনকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তারা হুশিয়ার দেন।
এদিকে মধ্যরাতে ববি শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী উগ্র সন্ত্রাসীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ইশা ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল সজল ও ফারজানা আক্তার মেমি নিজ বাড়ি খুলনায় যাওয়ার জন্য রুপাতলীস্থ বিআরটিসি কাউন্টারে যায়।
সেখানে কাউন্টার স্টাফ রফিক তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথাকাটাকাটির জ্বের ধরে সজলকে মারধর ও মেমিকে লাঞ্চিত করে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে এবং রফিককে গ্রেফতারের দাবি জানায়।
পুলিশ ১ ঘন্টার মধ্যে রফিককে গ্রেফতার করলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। পরে মঙ্গলবার দিবাগত গভীররাতে রুপাতলী এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে গিয়ে হামলা চালায় দৃর্বৃত্তরা।
এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হলে ১১ জনকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে রাতের এ হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে দুইদফার বেঠক শেষে ১০ ঘন্টা পরে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধে কর্মসূচি স্থগিত করে বুধবার বিকেল ৫ টায়।