বরিশালে শখের ছাদবাগান পূরণ করছে পুষ্টির চাহিদা

:
: ২ years ago

দিনে দিনে যে নগরের পরিধি বাড়ছে বরিশালের। সেই সঙ্গে হালের সব ছোঁয়াই এ শহরে লেগেছে। আর এসব কারনে হয়তো সময়ের সঙ্গে এ নগর সু-উচ্চ ভবনে গড়ে উঠছে, কমছে সবুজের পরিধি।

তবে বিগত কয়েক বছর ধরে ছাদ কৃষি এ শহরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে করোনার মধ্যে গেলো দু’বছরে ছাদকৃষির প্রতি সাধারণ বাসিন্দাদের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এসময়ের মধ্যে নগরের বেশিরভাগ ভবনের ছাদে ছোট থেকে বৃহৎ পরিসরে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকে।

কেউবা সবজি উৎপাদন করলে কেউ করেছেন ফল, আবার ফুলের বাগান করে সোভা বাড়িয়েছেন নিজের ছাদের। তবে গড় হিসেবে এ ছাদবাগানে পুরুষদের থেকে নারীরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এরকমই একজন বরিশাল নগরের শ্যাম বাবু লেনের বাসিন্দা প্রভাষক আনার কলি ঝুমুর, যিনি শখের বসে ছাদ কৃষি করছেন। ইতোমধ্যে তার ছাদকৃষি সফলতার মুখও দেখেছে।

তার ছাদবাগানে লাগানো আম, সফেদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ থেকে এরইমধ্যে ভালো ফলন এসেছে।

সেইসঙ্গে বেগুন, বিভিন্ন ধরনের মরিচ, লেবু, করল্লা, টমেটো, লাউসহ সবজিবাগান থেকেও আশানুরুপ উৎপাদন পেয়েছেন। ফুলের বাগানেও ঋতু অনুযায়ী বাহারি রংয়ের ফুলের দেখা মিলছে।

প্রভাষক আনার কলি ঝুমুর বলেন, ছাদবাগানটি শখের বসেই করা, যখন ভাড়া বাসায় থাকতেন বেলকুনিতে অল্প-সল্প গাছ লাগাতেন। আর নিজের বাড়ি হওয়ার পর ছাদ কৃষি করার পরিকল্পনা আটি এবং বাস্তবে রুপ দেই।

তিনি বলেন, নিজের হাতের উৎপাদিত সবজি, ফল খাওয়ার যেমন মজা আলাদা, তেমনি নিজের গাছে হওয়া ফল-সবজি দেখতেও আলাদা আনন্দ লাগে। আর এগুলো আমি সবসময় করে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ছাদকৃষিতে তেমন কোন কীটনাশক ও সার ব্যবহার করতে হয় না। মাটির সঙ্গে জৈব সারের ব্যবহারে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।

আর সময়মতো পানি দেওয়া, সামান্য পরিচর্যা ছাড়া তেমন কোন কষ্টও নেই। আমি চাই আমার দেখাদেখি এ কাজে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠুক।

তারমতো ছাদকৃষির সফলতায় আলাদা এক আনন্দ কাজ করে বলে জানিয়েছেন নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার বাসিন্দা গৃহিণী আছিয়া আক্তার।

তিনি বলেন, বাগান থাকায় প্রচন্ড এ গরমের সময় সূর্যের তাপ সরাসরি ছাদে পরছে না। বলা যায় ছাদবাগানের নিচের মানুষগুলো বেশ ভালো আছে গরমেও।

সেইসঙ্গে বাগানে ঘুরতে গিয়ে উৎপাদিত ফসল দেখে সবাই আনন্দিত হচ্ছে। এককথায় ছাদবাগান আলাদা এক অনুভূতি যোগাচ্ছে।

মুর কিংবা তানিয়া নন, বরিশালের ছাদ কৃষিতে সফলতা পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী দিলরুবা বেগম, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মোসফেকা বেগমসহ অনেকে। যারা নিজেদেরর কর্মস্থলের পাশাপাশি সংসার সামলিয়ে এ কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোমা রানী দাস বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকা হওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কম, তাই আমরা ছাদ কৃষিতে মানুষকে আগ্রহী করার চেষ্টা করছি।

ছাদ বাগানে কোন ধরনের ক্ষতিকারক কিছু প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না। এখানে নির্ধারিত একটা সময় সময় দিলেই হয়।

বিশেষ করে বিকেল বেলার অবসর সময়টা ছাদ বাগানে দিলে বাগানও যেমন ভালো থাকবে তেমনি সবার মনও ভালো থাকবে।

নিরাপদ খাদ্য বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই ছাদ বাগান থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর পারিবারিক পুষ্টির চাহিদার কিছু অংশ এখান থেকে পূরণও হচ্ছে।

সেইসঙ্গে যে কোন সমস্যা সমাধানে বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস ছাদবাগানে আগ্রহীদের পাশে থাকবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও ঘোষণা দিয়েছেন যারা ছাদ বাগান করছেন তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স-থেকে নির্ধারিত একটা অংশ মওকুফ করে দেওয়া হবে।