বরিশালে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আবারও করোনায় আক্রান্ত ডা. শিহাব

:
: ৪ years ago

রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আবারও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) মো. শিহাবউদ্দিন।

বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে চিকিৎসক মো. শিহাবউদ্দিন সুস্থ আছেন। বর্তমানে তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে।

পুনরায় সংক্রমিত হওয়া চিকিৎসক মো. শিহাবউদ্দিন জানান, গত ১৮ এপ্রিল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়। সেখানে নমুনা পরীক্ষার পর ২০ এপ্রিল রাতে জানানো হয় তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশন নেয়া হয়। ১০ দিন পর প্রথম এবং এর ৭২ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ আসে। এরপর ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে গত ২০ মে তিনি কর্মস্থলে যোগ দেন। এরপর থেকে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিলেন। মাঝে একদিন তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন।

চিকিৎসক মো. শিহাবউদ্দিন জানান, মানিকগঞ্জ দুই আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার স্বজনরা প্লাজমা সংগ্রহের জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২৬ মে ঢাকায় গিয়ে প্লাজমা দিয়ে আসেন। একদিন পর ফের তিনি কাজে যোগ দেন। এরপর তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ করে গত ২৯ মে জ্বরে আক্রান্ত হন। ৩১ মে পুনরায় তার নমুনা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হয়। ৩ জুন রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

তিনি জানান, বাবুগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়ে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী গত ৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির তৃতীয় দিনে ওই রোগী জ্বরে আক্রন্ত হন। করোনভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছিল। পরে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনিসহ (শিহাবউদ্দিন) সেবিকারা ওই রোগীর সেবা করেছেন। সেবা দিতে গিয়ে ওই রোগীর সংস্পর্শে যেতে হয়েছে তাকে। এরপর একে একে তিনি, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নার্স এবং একজন পিয়নসহ ৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

প্রথমবার করোনায় আক্রান্তে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, শুরুর দিকে জ্বর ছিল। এরপর সর্দি-কাশির সঙ্গে গলাব্যথা শুরু হয়। ভীষণ দুর্বল লাগত। সে এক অবর্ণনীয় অবস্থা। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনেছি। সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানিতে সেরে উঠেছি।

মো. শিহাবউদ্দিন বলেন, সুস্থ হয়ে গত ২০ মে কর্মস্থলে যোগ দেই। গত ২১ মে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাথায় আঘাত নিয়ে ৩০ বছরের এক যুবক ভর্তি হন। ভর্তির সময় ওই রোগীর সঙ্গে তার ভাই ছিল। ওই রোগীর ভাই কয়েকদিন আগেই ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন। পরে নমুনা পরীক্ষায় ওই রোগীর ভাইয়ের পজিটিভ এসেছে। সম্ভবত দ্বিতীয়বার তার মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছি।

তিনি জানান, বর্তমানে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। সাধারণ খাবারই খাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টা গরম পানি ফুটিয়ে ভাপ নিচ্ছেন। গরম পানি, চা পান করেছেন কয়েকবার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করেছেন। বর্তমানে তার করোনার কোনো উপসর্গ নেই। তবে খাবারে কোনো স্বাদ পাচ্ছেন না তিনি।

চিকিৎসক মো. শিহাবউদ্দিন বলেন, আগের বারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে। মনোবল হারানো যাবে না। মনে সাহস রাখতে হবে। আইসোলেশনে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া যে তিনি শারীরিক ও মানাসিকভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারের সবাইকে সুস্থ রেখেছেন।

বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুবাস সরকার বলেন, চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানুষের কাছে যেতে হচ্ছে। তারা সংক্রমিত হচ্ছেন। আমাদের সবাইকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কারও যদি করোনার উপসর্গ থাকে, তবে তিনি যাতে তা না লুকিয়ে রাখেন বা গোপন না করেন। কারণ এতে তার স্বজনসহ চিকিৎসকরাই সংক্রমিত হচ্ছেন, আর এই পরিস্থিতি চিকিৎসকরা আরও বেশি সংক্রমিত হওয়া শুরু করলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তাও অনুধাবন করা কঠিন।