বরিশালে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি, থেমে থেমে যানজট

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

ঢাকা-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল শহরাংশের ৫ কিলোমিটারে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার পরিবহন চালকরা বলছেন, থ্রি-হুইলারসহ সব ধরনের যানবাহনের চাপে বরিশাল নগরের কাশিপুর বাজার থেকে রুপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচলে ধীরগতি রয়েছে।

এতে করে দীর্ঘ তিনঘণ্টার যাত্রা শেষে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর রোদ ঝলমলে আবহাওয়ায় তীব্র গরম যেন যাত্রীদের কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

ঢাকা থেকে পটুয়াখালীগামী বাসের যাত্রী নুসরাত জানান, উদ্বোধনের পর ঠিক করেছেন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশালে আসবেন। তবে আজ সায়েদাবাদে যাত্রীর চাপ থাকায় ব্যাপক ভোগান্তির পর বাসে উঠতে পেরেছেন।

পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজাসহ বিভিন্ন জায়গায় যানজট ও যানবাহনের ধীরগতির কারণে ৫ ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় করে বরিশালে পৌঁছেছেন। আর এখন নথুল্লাবাদ থেকে রুপাতলী পর্যন্ত মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ যেতে প্রায় আধঘণ্টা বাসের ভেতর গরমে বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।

 

তিনি বলেন, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের জট ঠেলে বাসটি চৌমাথা এলাকায় এসে আটকে যেতে হলো। সেখান থেকে কোনোভাবে পার হয়ে সাগরদী ব্রিজ পর্যন্ত এসে এখন যানবাহনের এতই ধীরগতি যে পিপড়াও হয়তো আমাদের আগে যাচ্ছে।

 

ট্রাকচালক মজিবর রহমান বলেন, সাগরীদ ব্রিজ থেকে রুপাতলী পর্যন্ত মহাসড়কের অংশটি সরু। তার ওপর সড়কের পাশে নেই কোনো সাইড সোল্ডার। যেখানে সড়ক শেষ তার পর মাটি এতোটাই নীচে যে কোনোভাবে সড়ক থেকে একটি চাকা পরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমার লোড ট্রাকটি উল্টে যাবে।

তাই পণ্য ও যাত্রী পরিবহনসহ যানবাহনগুলোকে বাম পাশে জায়গা রেখে এগুতে হচ্ছে। এদিকে এটুকু সড়কজুড়ে ব্যাটারি রিক্সা, হলুদ অটো রিক্সা, মাহিন্দ্রা, মোটরসাইকেলের চাপ থাকায় কচ্ছপ গতিতে এগুতে হচ্ছে।

 

যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা রোধে কোরবানির ঈদের আগে সাগরদী ব্রিজ থেকে রুপাতলী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢাল পর্যন্ত সরু মহাসড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে সাইড সোল্ডার বানিয়ে দেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু এ অব্দি সেটা তারা করেনি।

 

এদিকে সোলাইমান নামে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী বাসের হেলপার জানান, বরিশাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। তবে থ্রি-হুইলারের জন্য তাদের মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বড় বড় মোড়গুলোর বাহিরে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত রাস্তাগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি উঠে পুরোই ব্লক করে দিচ্ছে। এসব কারণে বরিশাল শহরের মধ্যদিয়ে গত কয়েকদিন ধরে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে যানজটে পরতেই হচ্ছে। কিন্তু রুপাতলী বাস টার্মিনাল পার হয়ে গেলে পিরোজপুর বা কুয়াকাটা পর্যন্ত কোথাও তেমন কোনো যানজট নেই।

 

এদিকে থ্রি হুইলার চালকদের দাবি, এ অংশ মহাসড়কের হলেও, শহরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের নাগরিকদের যোগাযোগ স্থাপনের প্রধান সড়কই এটি। তাই দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে তাদেরও এ সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। নথুল্লাবাদ থেকে আমতলা পানির ট্যাংকির মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে আরও দুটি লেন থাকলেও সেটি ভাঙ্গাচোরা থাকায় বর্তমানে কেউ সেটি ব্যবহার করছে না।

আর আমতলা পানির ট্যাংকির মোড় থেকে রুপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কটি সরু। সেই সঙ্গে সাগরদী ব্রিজের পর সড়কের পাশের মাটির অংশ এতোটাই নিচে যে সেই অংশ দিয়ে বাই সাইকেল ছাড়া আর কিছুই চলাচল করতে পারেনা।

 

এসব কারণে গত কয়েকদিন ধরে বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নথুল্লাবাদ, চৌমাথা ও সাগরদী ব্রিজ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া দিনের মধ্যে প্রায়সময়ই সাগরদী বাজার থেকে রুপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি থাকে বলে জানিয়েছেন অটোরিক্সা চালক সাগর ও আলামিন। তবে এ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।