পুরুষ নির্যাতন কারে কয়,কত প্রকার ও কি কি তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী সুমন সরদার। অর্থলোভী, প্রতারক, মামলাবাজ এক নারীর খপ্পরে পড়ে ঝুলি হারা হয়ে পড়েছে সে।
বিয়ে ও মামলাকে ফাদ বানিয়ে ওই নারী তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। দেড় ডজন মামলায় আইনী লড়াই করে রক্ষা পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েও রক্ষা পায়নি সে। তালাকের প্রায় সাড়ে ৪ বছর পরে পুনরায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।
এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সুমন সরদার রাজনীতিবিদ, প্রশাসন, সাংবাদিক সহ সকল জনগণের সহায়তা কামনা করছে। এ ব্যাপারে ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে। সাংবাদিক সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্য শুনে উপস্থিত সাংবাদিকরা হতচকিত হয়ে পড়ে ।
কোন নারীর এধরণের কথা তারা কোনদিন গল্পেও শোনেনি। পিরোজপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য এখবর জানা যায়। ক্লাবের সদস্যরা জানায়, লিখিত বক্তব্যে সুমন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, মামলাবাজ ওই নারীর নাম বেবী আক্তার। তার বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার ভাইজোরা গ্রামে। তিনি মৃত্যু হাবিবুর রহমানের মেয়ে।
২০০৯ সালে পিরোজপুর জেলা কারাগারে কর্তব্য পালন কালে বেবির সাথে তার পরিচয় হয়। বদলি হয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে আসার পরে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারী ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে বেবিকে বিয়ে করে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা আবু হানিফ সরদারের ছেলে সুমন সরদার ।
বিয়ের পর বরিশালের ব্যাপ্টিষ্ট মিশন রোডে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করে। বিবাহের কিছু দিন পর সুমন জানতে পারে বেবী আক্তারের পূর্বে আরো একটি বিবাহ ছিলো।
তাছাড়া সুমনের সাথে বিয়ের সময় কাবিন নামায় বেবী তার বয়স ৫ বছর কমিয়ে জন্ম তারিখ ১২ মার্চ ১৯৮৫ লেখায়। প্রকৃতপক্ষে তার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ১২ মার্চ ১৯৮০ ইং।
বেবী তার পূর্বের স্বামী আব্দুল আলিম এর সাথে অবৈধ সম্পর্ক বজায় রাখে। মুঠোফোনের মাধ্যমে বিষয়টি টের পায় সুমন। এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বেবি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
শুরু হয় মামলা মোকদ্দমা। এছাড়াও বেবি উচ্ছৃঙ্খল চালচলনে চলাফেরা করতো , উগ্রমেজাজে কথা বার্তা বলতো। সারাদিন মোবাইলে বাহিরের লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলতো।
সে প্রাইমারিতে চাকরি নেওয়ার কথা বলে লোণ তোলার জন্য সুমনের কাছ থেকে নিজ নামিয় ৩টি ব্যাংক চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে ওই ৩টি চেক দিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ১০ লাখ টাকার চেক প্রতারণা মামলা দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বেবি বাদী হয়ে স্বামী সুমনের বিরুদ্ধে সি, আর-৭৯/১২ (পিঃ), সি, আর ৫/১৮(পিঃ), নারী ও শিশু-১৩/১৪ (পিঃ), নারী ও শিশু -১৩/১৬ (পিঃ), নারী ও শিশু-৩৭/১৩ (পিঃ), নারী ও শিশু-৬৯/১৮ (পিঃ), জি,আর -৫১/১৮ (পিঃ), এমপি নং – ২৪/১৪, এমপি নং ৩৪৯/২২, এমপি নং -৪৩৩/১৩ সহ প্রায় দেড় ডজন মিথ্যা ও হয়রানী মূলক মামলা দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় কোন কারণ ছাড়াই সুমন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সুমনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী দপ্তরের মিথ্যা, হয়রানী মূলক অভিযোগ দিতে থাকে।
তার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে সুমন ওইসব অভিযোগ ও মামলা হতে অব্যাহতি লাভ করে। অনেক মামলায় সুমনের পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, সহকর্মীসহ তার পক্ষের লোকজনকে আসামী করে হয়রানী করে। বেবির বেপরোয়া চলাফেরা,সুমনের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনের সাথে দুর্ব্যবহার, এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা দায়ের করে হয়রানি করায় তার সংসার জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। একবার বেবি তার ভাই মাইনুল ইসলামকে সাথে নিয়ে বটি
দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। সুমন পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পিরোজপুর সদর থানায়, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানায়,
বরিশালের কোতয়ালী মডেল থানা ও পটুয়াখালী সদর থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরী করে।
এতেও সুমনের স্ত্রী বেবি নমনীয় হয়নি। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট তারিখে বেবীর গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। এরপর বেবি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে সুমনের বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সুমনকে ঘর জামাই থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। সে তার বেতনের সব টাকা তার হাতে দিতে চাপ দেয়।
এছাড়া সুমন আরও জানতে পারে তার স্ত্রী বেবি আক্তারের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে খুলনার খালিশপুর থানার মামলা জি.আর নং-১৬০/১৩,তারিখ-১৭/০৭/২০১৩ইং,এবং তার ভাইয়ের বউয়ের দায়ের করা খানজাহান আলী থানার মামলা জি.আর
নং-৮৯/১৫,তারিখ-১৯/১০/২০১৫ মামলা রয়েছে।
এতে বেবীর সাথে শান্তিতে, নিরাপদে সংসার জীবন যাপন করা তার পক্ষে অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এমনকি তার জীবন হুমকীর সম্মূখীন হয়ে ওঠায় ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বেবী আক্তারকে তালাক দেয় সুমন ।
তারপরেও বেবী আক্তারের দায়ের করা কাবিন ও খোরপোশের মামলায় সুমন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডিক্রি জারির আদেশ মেনে মাসে মাসে টাকা দিচ্ছে। অতিলোভী দুষ্টচক্রী এতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
সুমন এক ঘনিষ্ট লোকের মাধ্যমে জানতে পারে গত ৮ আগস্ট বেবি আক্তার বাদী হয়ে তাকে অভিযুক্ত দেখিয়ে পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ দিয়ে মামলা দায়ের করেছে।
মামলায় বলা হয়েছে সুমন গত ৬ মে দুপুর আড়াইটার সময়ে বেবির বাড়ির পাশের বাড়িতে গিয়ে বেবিকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এতে ধস্তাধস্তিতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে পিরোজপুর হাসপাতালে পাঠায়। সুমন এসময় পালিয়ে যায়। মামলায় অভিযোগের সাথে তিনি আদালতে একটি ইনজুরি সার্টিফিকেটও দাখিল করে।
আদালত মামলাটি অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিরোজপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে আদেশ দেন। মামলায় উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে সুমন জানায় এসম্পর্কে তিনি কিছুই জানেনা।
তিনি ৫ মে ছুটি নিয়ে বিশেষ কাজে লঞ্চ যোগে ঢাকায় গেছিলেন ৭ মে কাজ শেষে বরিশালে ফিরে ডিউটিতে যোগ দিয়েছেন। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
অনুসন্ধানের আগেই আদালতে ইনজুরি সার্টিফিকেট দাখিলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছে আইন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানায় আইনানুসারে ডাক্তারী সনদ কোন রোগী বা ভিকটিম পাবেনা।
মামলা দায়ের হলে আদালতের আদেশে তদন্ত কর্মকর্তা হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করে আদালতে পেশ করবে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ায় বেবির দাখিলকৃত সার্টিফিকেটও সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
পিরোজপুর সংবাদ সম্মেলন করার ব্যাপারে নিশ্চিত করেন রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি জহিরুল হক টিটু। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সুমন সরদার বলেন, আমি কুচক্রী ওই নারীর ছোবল থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে সহযোগিতা কামনা করছি।