বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে দলীয় মনোনায়ন পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
অনেকে দলীয় মনোনায়ন পেয়েছেন আবার অনেকে মনোনায়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করছেন। এক কথায় সিটি নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বেশ ভালো তোড়জোর দেখা যাচ্ছে।
যদিও সিটির তফসিল ঘোষণার মাঝেই সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশালের রাজনীতি। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জানান দিচ্ছে সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা। যদিও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, বিএনপির এমন ঘোষণায় সংসদ নির্বাচন নিয়েও তাদের মাঝে তেমন কোনো তোড়জোর লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, পোস্টার-ব্যানার-ফ্যাস্টুনে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট। তবে অধিকাংশ প্রার্থীই দলীয় মনোনায়ন না পেলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন। সে সঙ্গে আবার প্রায় সব প্রার্থীই নিজেদের যোগ্যতা ও ত্যাগের জানান দিয়ে দলীয় মনোনায়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছেন।
জেলা তথা বিভাগের হাব ক্ষ্যাত বরিশাল-৫ (সদর) সংসদীয় আসনটি প্রশাসনিক কারণ ছাড়াও ভৌগলিক কারণেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর এ আসনে এরই মধ্যে নতুন দুই সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এস এম জাকির হোসেন এবং বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু। যদিও এ আসনের বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামীম নিজেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুর মতে, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে বেশি মানুষের বৃহৎ আকারে উপকার ও সেবা করা সম্ভব হয় না। তবে সংসদে গেলে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে কথা যেমন বলা যায় তেমনি তাদের জন্য অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের হাত ধরে দীর্ঘ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০ বছর ধরে ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে আছি। এছাড়া টানা দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে রুট লেভেলের মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। তবে সংসদে যেভাবে বিভিন্ন সমস্যা সরাসরি তুলে ধরা যায়, তৃণমূলের কথা বলা যায় এখানে তেমনটা যায়না। স্থানীয় চেয়ারম্যানের থেকে সংসদ সদস্যের ক্ষমতা বেশি হলেও বরিশালে বিগত সময়ে তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। তাই বরিশালের উন্নয়নে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করার লক্ষে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানত আব্দুল্লাহকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে, তারও সদিচ্ছা রয়েছে, এখন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনায়ন দিলে নির্বাচন করবো।
অপরদিকে দক্ষিনাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক বরিশাল-১ আসনের সাংসদ ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আবুল হাসানত আব্দুল্লাহ’র দোয়া নিয়েই সংসদীয় আসনে প্রচার-প্রচারণার কাজ করে যাচ্ছেন অপর মনোনায়ন প্রত্যাশী প্রার্থী এস এম জাকির হোসেন।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে দলীয় সভানেত্রী মনোনায়ন দেবেন এমন প্রত্যাশা নিয়ে এস এম জাকির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় শহর বরিশাল এক অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে। এখানে সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উন্নয়ন ঘটাতে হবে, পরিকল্পনা নিয়ে এগুলো এ শহরেই প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান ঘটবে, ঢাকায় ছুটতে হবে না। এসব কিছু স্বাভাবিক বিষয় হলেও বরিশাল সদর আসনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটনি, আমি চাই এ অঞ্চলের সব পর্যায়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে, এ বরিশালের উন্নয়নে কাজ করতে।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দীর্ঘবছর ধরে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদেও রয়েছি। এ সিটির কাউন্সিলর ছিলাম, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রেসক্লাবের একাধিকবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, আবার নিজে ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীক সংগঠন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক হওয়াসহ সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। সব মিলিয়ে বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের মানুষ আমাকে চেনে এবং সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে আমি তাদের নিজ সামর্থ অনুযায়ী পাশেও থাকি। এখন প্রত্যাশা বঞ্চিত সাধারণ মানুষগুলোও আমাকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রেরণা দেয়।
বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এ আসনে দুজন মনোনায়ন প্রত্যাশী হলেও, নির্বাচনের আগে বিগত সময়ের মতো মনোনায়ন চাইতে পারেন সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন-বীর বিক্রম, ব্যবসায়ী আরেফিন মোল্লা, সমাজেসবক সালাহউদ্দিন রিপন। এর বাইরে দলীয় মনোনায়ন চাইতে পারেন সাবেক এমপি জেবুন্নেসা আফারোজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল।
অপরদিকে বিগত দিনের ন্যায় বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) সংসদীয় আসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে আবুল হাসানত আব্দুল্লাহ’র বিকল্প আওয়ামী লীগে কেউ চিন্তাও করছে না।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদারের পাশাপাশি সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা, শেরে বাংলার নাতি একে ফাইয়াজুল হক রাজু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনিচুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, ব্যবসায়ী ক্যাপ্টেন (অব.) মোয়াজ্জেম হোসেন, সংরিক্ষত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মীরাও চাইতে পারেন দলীয় মনোনায়ন।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের গ্রামের বাড়ির সংসদীয় বরিশাল-৩(বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতিয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ভবিষ্যতে এ আসনে আওয়ামী লীগের তেমন জনপ্রিয় কোনো নেতার নাম এখন মনোনায়ন প্রত্যাশীর তালিকায় শোনা যায়নি।
আর বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ সামনের নির্বাচনেও মনোনায়ন প্রত্যাশী। তবে এ আসনে মনোনায়ন প্রত্যাশী রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমসহ আরও বেশ কয়েকজন।
আর বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ অর্থাৎ বরিশাল-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ার সদস্য নাসরিন জাহান রত্মা আমিন নির্বাচন করবেন। তবে জোটের স্বার্থে এবারে এ আসনটি আওয়ামী লীগ না ছাড়লে এখানে মনোনায়ন প্রত্যাশী রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, বাকেরগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম চুন্নুসহ বেশ কয়েকজন।
ঐতিহ্যবাহী এ দলে একাধিক মনোনায়ন প্রত্যাশী থাকাটা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয় বলে জানিয়েছে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহম্মদ ইউনুস।