বরিশালে মাছ হাবিবের লালসার শিকার কলেজছাত্রী- গেলো প্রাণ!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মালেক মিয়ার কন্যা শামিমা আক্তার ছবি (৩০) শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ(শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, বিষপানের কারণে মাঝ বয়সী ডিভোর্সি ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে পর্যালোচনা করে মিলেছে তথ্যের বহু অসংলগ্নতা।

শনিবার হাসপাতালে ছবি’র লাশের সঙ্গে থাকা তার ফুফাতো ভাই কবির জানিয়েছেন, বরিশাল নগরীর বিএম কলেজ এলাকায় ছবি’র বোনের মেয়ে রিমু’র বাসায় বসে বিষপান করেন ছবি। খবর পেয়ে তিনি (কবির) পাথরঘাটা থেকে এসেছেন। তবে বিষপানের কারণ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছবি’র বাবা মালেক মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। কিছুই বলতে পারব না। কিন্তু রহস্যের জাল বিস্তর করেছে দুই কন্যা সন্তানের ওই জননীর মৃত্যুর সাথে বরিশালের বাসিন্দা মৎস্য শ্রমিকলীগ নেতা খান মো. হাবিব ওরফে মাছ হাবিবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি।

শুক্রবার রাতে শেবাচিম হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে দায়িত্বরত জালাল মিয়া বলেছেন, ওই নারীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসেন তার (জালালের) পূর্ব পরিচিত খান মো. হাবিব ও মান্নান নামের দুই ব্যক্তি। পরবর্তীতে ছবি’র মৃত্যু হলে মান্নানকে সেখানে রেখে হাবিব পালিয়ে যান। এরপর ওই রাতে এবং শনিবার সারা দিনেও হাবিবকে লাশের আশেপাশে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে শেবাচিম হাসপাতালে গিয়ে হাবিবকে দেখা না গেলেও বরিশাল তার সাঙ্গপাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত একাধিক লোককে হাসপাতালে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। তবে হাবিব সাংবাদিকদের কাছে ছবিকে তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ছবির মেয়ে অনি তাকে মোবাইলে ফোন করে মায়ের বিষপানের খবর জানালে সে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন। এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত পাথরঘাটার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে- খান হাবিবের সাথে মৃত শামিমা আক্তার ছবির হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই বিবাদ সৃষ্টির কারণ থেকে ছবিকে লাশ হতে হয়েছে। আর অবস্থা বেগতিক দেখে মাছ হাবিব পালিয়ে গিয়ে অর্থ ও ক্ষমতার জোরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নিহত ছবির পরিবারকে অর্থের লালসা এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রেখেছেন। এই বাস্তবতায় সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ছবির পরিবার হাবিবের কাছে তার লাশ বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থের ভারে মাটিতে মিলিয়ে গেছে হাবিবের অপরাধ। ত

বে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, যদি বোনের মেয়ের বাসায় বসেই ছবি বিষপান করে এবং তার মেয়ে অনি বিষয়টি জেনে থাকে তাহলে তারা হাসপাতালে ভর্তির সময় কেন হাবিব এবং মান্নানের সাথে ছিলেন না এবং শনিবার দিনে লাশের সুরতহাল, পোস্টমর্টেমসহ কোন কার্যক্রমেই মেয়ে এবং বোনের মেয়েকে কেন দেখা যায়নি (?) আর যাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে আসলেন, তার মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের পাশে থাকার পরিবর্তে কেন খান হাবিব মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপন করেছেন ? বিষয়টি সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে অনুসন্ধানের জন্য পাথরঘাটার একাধিক ভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে বহু অজানা তথ্য। অনেকের মতে খান হাবিবের সঙ্গে নিহত ছবির গোপন অভিসার এবং তার অপকর্মের ফিরিস্তি সম্পর্কে। স্থানীয় ও হাবিব ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, পাথরঘাটায় মৎস্য মোকামের ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে খান হাবিব মাসের অধিকাংশ সময় সেখানে অবস্থান করেন। মাছ ব্যবসার পাশাপাশি হাবিবের সেখানে বরিশাল গেস্ট হাউজ নামে একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলও আছে। আর নিহত ছবি’র দুই মেয়ে অনি ও জিমি। প্রায় দুই বছর আগে স্বামী লাল মিয়ার সাথে ছবির বিচ্ছেদ ঘটে।

বর্তমানে সরকারি বরিশাল কলেজে অনার্সে পড়ুয়া বড় মেয়ে অনি থাকেন নগরীর বৈদ্যপাড়ার একটি ছাত্রী মেসে। আর ছোট মেয়ে জিমিকে নিয়ে পাথরঘাটায় থাকতেন ছবি। পরিবার বরিশালে রেখে হাবিব পাথরঘাটায় একা থাকায় এবং ডিভোর্সি শামিমা আক্তার ছবি’র বেপরোয়া-উশৃঙ্খল জীবন যাপন থেকেই উভয়ের মাঝে ঘটে পরিচয়, সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠতা। একপর্যায়ে তারা পরকীয়ায় আশক্ত হলে হাবিবের গেস্ট হাউজে ছবি’র শুরু হয় অবাধ যাতায়াত। পরবর্তীতে ছবির পিত্রালয়ে ঘর নির্মাণ, আসবাবপত্রসহ আলিসান কায়দায় জীবন যাপনের সব রকম ব্যবস্থা করে দিয়ে পাথরঘাটায় অবস্থানকালে হাবিব ছবি’র বাড়িতেই জামাই আদরে থাকতে শুরু করেন। হাবিবের সার্বিক বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন, দিনের পর দিন ওই নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন হাবিব।

তার অর্থের লোভে পড়ে কিছু দিন যেতেই ওই নারী হাবিবকে চাপ দিতে শুরু করেন বিয়ের জন্য। সেখান থেকেই তাদের মাঝে মনোমালিন্য এবং বিবাদের সূত্রপাত। বরিশালে স্ত্রী-সন্তান থাকায় ছবির সঙ্গে সবকিছু করলেও বিয়ে করতে রাজি হননি হাবিব। এভাবে ঝগড়া-বিবাদের মাঝেও তাদের রাত্রীযাপন অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি ছবি বিয়ের জন্য হাবিবকে ঘনঘন তাগাদা দিলে শুক্রবার বিকেলে এ নিয়ে গেস্ট হাউজে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক বাগবিতন্ডা হয়। সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই হাবিব তার লোকজনকে জানায় ছবি অসুস্থ হয়ে পড়েছে হাসপাতালে নিতে হবে। সুচতুর হাবিব স্থানীয় হাসপাতালে ছবিকে নিয়ে গেলে সব ফাঁস হওয়ার ভয়ে পাথরঘাটার মৎস্য মোকামের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর গাড়িতে করেই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের অবৈধ সম্পর্কের শেষ পরিণতিতে ছবি’র মৃত্যু হলে হাবিব নিজেকে রক্ষায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান এবং মুঠোফোন বন্ধ করে তার লোকজন দিয়ে নিহত ছবির পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখেন।

ছবির বাবা, দুই মেয়ে এবং অন্যান্য আত্মীয়দের অর্থের লালসা দেখিয়ে বিষয়টি চেপে যেতে বলেন এবং কাউকে প্রকৃত ঘটনা জানালে ছবির মতই পরিণতি হবে বলে হুশিয়ার করে দেন। এসব ঘটনা পাথরঘাটার একাধিক বাসিন্দা ও হাবিবের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের কাছ থেকে শোনা গেলেও প্রকাশ্যে কিছুই বলতে পারবেন না বলে তারা সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন। তবে বিয়েতে হাবিবের অমতের কারণে মনোকষ্টে ছবি বিষপান করেছেন, নাকি ছবি বিয়ের জন্য অতিমাত্রায় চাপ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিব তাকে বিষপান করিয়েছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। এই বিষয়ে জানতে বরিশাল মৎস্য শ্রমিকলীগ নেতা খান মো. হাবিবের মুঠোফোনে একাধিক চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।