বরিশাল নগরীতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন কর্মীদের বাধার মুখেও সাড়ে ১৪ মণ ওজনের একটি শাপলা পাতা মাছ বিক্রির প্রচার ও বিক্রির ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীপুরের একটি চরে ধরা পড়া মাছটি ৫০০ টাকা দরে বিক্রির জন্য রাতে নগরীতে মাইকিং করার সময় তাতে বাধা দেন এনিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্যরা।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নগরীর ভাটিখানা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সামনে এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে সংগঠনটির সমন্বয়ক তুবা নাহার বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে শাপলা পাতা মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। তবুও নগরীতে শাপলা পাতা মাছ বিক্রির মাইকিংয়ের খবর পেয়ে ভাটিখানা এলাকায় তারা মাছটি আটক করেন।
“এ সময় পোর্ট রোড মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা আসে। মাছটি ধরা-বিক্রি অবৈধ জানালেও তারা মানতে চায়নি। এ নিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে আমাদের ও মাছ ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিয়েছে।”
তুবা নাহার আরও বলেন, তাদের বাধা দেয়ার কারণে মাছটি সকালে কাটার কথা থাকলেও রাতেই কেটে ফেলেছে। তারা এ মাছ শিকার ও বিক্রি বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের কারণে সফল হননি।
পোর্ট রোডের মাছ ব্যবসায়ী পরশ ঘরামী জানান, ভোলার মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা ১০ জন এক লাখ ২০ হাজার টাকায় মাছটি কিনেছেন। পরে বুধবার সকাল ৮টা থেকে পাঁচশত টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে নগরীতে মাছ ভ্যান গাড়িতে ও রিক্সায় মাইক নিয়ে প্রচারণা করেন।
এ সময় কিছু লোক এসে ঝামেলা করছিলো তবে পুলিশ এসে মিটিয়ে দিয়েছে জানিয়ে পরশ বলেন, “তারা বলছে এ মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ। তাইলে নগরীতে প্রায় সময় বিক্রি হয় কেমনে?”
তিনি জানান, গোলাকার শাপলা পাতা মাছটির লেজ ৮ ফুট লম্বা। লম্বা-প্রস্থ ৮ হাত করে। মাছটির বয়স ১০ থেকে ১২ বছর বলে ধারণা করছেন পরেশ।
তিনি জানান, রাত ১২টার দিকে মাছটি পোর্ট রোডে নিয়ে আসা হয়। এরপর মাছটিকে চার টুকরা করে বরফ দিয়ে রাখা হয়েছে।
পরেশ জানান, মাছটি তিন লাখ টাকায় বিক্রির টার্গেট রয়েছে তাদের।
বুধবার বেলা ১১টায় এই মাছ ব্যবসায়ী আরও জানান, সকাল থেকে মাছটি বিক্রি শুরু করেন তারা। এর মধ্যেই অর্ধেক মাছ বিক্রি হয়ে গেছে।
অপর মাছ ব্যবসায়ী রাজু জানান, ভোলার ভেদুরিয়া ও বরিশালের শ্রীপুরে মধ্যে তেতুলিয়া নদীর একটি তরমুজ ক্ষেত থেকে শাপলা পাতা মাছটি ধরা হয়েছে।
কৃষকদের বরাতে তিনি বলেন, বৃষ্টি এবং নদীর পানিতে বেশিরভাগ তরমুজ নষ্ট হয়েছে। তাই মঙ্গলবার দুপুরে চরে তরমুজ কাটতে যান কৃষকরা।
এক পর্যায়ে ক্ষেতের মধ্যে দেখতে পান বিশালাকায় কিছু একটা নড়ছে। এ সময় তাদের মধ্যে ভয় কাজ করলেও পরে সেখানে যান। গিয়ে দেখতে পান শাপলা পাতা মাছ।
বরিশালে সাড়ে ১৪ মণের শাপলা পাতা মাছ: বাধার মুখেও প্রচার, বিক্রি
কৃষকরা জানিয়েছে, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছটিও চরে উঠে যায়। এরপর পানি কমে গেলে বালিতে মাছটি আটকে যায়।
রাজু বলেন, এরপর তরমুজ চাষী জসিম বেপারীসহ ৭ জন মিলে মাছটিকে একটি স্পিডবোটে তুলে বিকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে নিয়ে আসেন। পরে নিলামে তারা ১০ জন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় মাছটি ক্রয় করেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, “ রাতে একটি শাপলা পাতা মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ‘এনিমেল লাভার’ নামের একটি গ্রুপ খবর পেয়ে মাছটি আটকে এই মাছ শিকার অবৈধ বলে দাবি করে।
“তারপর পোর্ট রোড থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হই-হুল্লোর হয়। পরে দুই পক্ষকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সূত্র:বিডিনিউজ