বরিশালে বিপুল পরিমান অবৈধ চিংড়ি রেনু পোনা পাঁচারে হারুনসহ আটক ১৪

:
: ৬ years ago

রিশালের নেহালগঞ্জ ফেরীঘাট থেকে বিপুল পরিমান বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনু পোনাসহ ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল ২৩ মে ভোর ৫ টায় স্থানীয় জনতা ফেরী থেকে রেনু ভর্তি ড্রাম ট্রলার থেকে ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো ট-১৬৩৯১৬) উঠাতে দেখে সাংবাদিক ও বন্দর থানা পুলিশকে খবর দেয়। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই পুলিশ এসে রেনু ব্যবসার মূল হোতা হারুন ওরফে পাতিল হারুনসহ অন্যান্যদের বাচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বন্দর থানা থেকে একে একে ৩ টি টহল গাড়ীর টিম এসে ৫ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসী পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালে মৎস্য কর্মকর্তা ও ইউওনোর সহযোগিতায় আটককৃত ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনকে ২৮ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করে। আটককৃত প্রায় ৩৫টি ড্রাম ভর্তি রেনুগুলো নদীতে অবমুক্ত করে দেয়। পুলিশ রহস্যজনক ভাবেই আটককৃতদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে আগেই ছেড়ে দেয়।

এসময় হারুন সাংবাদিকদের কাছে বলেন প্রতিদিন বন্দর থানা পুলিশকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে রেনুর ব্যবসা করেন। বন্দর থানার বকসি ফায়জুর রহমানের মাধ্যমেই তিনি থানার টাকার লেনদেন করেন বলে জানান।

সূএ জানায় বরিশাল বিভাগের কয়েকটি থানার কিছু অসাধু পুলিশ, মৎস্য কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে প্রশাসনের চোখের সামনে চিংডির রেনু পাচার হচ্ছে। এসব রেনু বরগুনার আমতলী, তালতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাডা, মহিপুর, কুয়াকাটা ও আলীপুর মোকাম থেকে কমপক্ষে ১০টি এবং বরগুনা সদর থেকে দুটি ট্রাক বরিশাল হয়ে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় যায়। রেনু ব্যবসার গড ফাদার হিসেবে চিহ্নিত টুঙ্গিপাড়ার টুলু। কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, টুলুর লোক হিসেবে বরিশালের রনি ও হারুনের মাধ্যমে ভোলা গলাচিপা বরিশাল সদর ও পাথরঘাটার পাতিলপ্রতি, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও ক্যাডারদের মাসে এক লাখ টাকা, ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর মধ্যে কোষ্টগাট, নৌ বাহিনী, নৌ পুলিশ, ফিসারি, ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশ, ফাঁরি পুলিশ , টহল পুলিশসহ জিরো থেকে উপর লেভেল সবাইকে মাসিক মোটা অংকের টাকা দিয়ে এসব ট্রাকে করে পোনা পাচার করা হয় । আর এসব কিছু ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে পরিচালনা করেন পোর্টরোড মৎস্য আরদ ব্যবসায়ী রনি, পাতিল হারুন ও নেহাল গঞ্জের জাকির নামের এক ব্যক্তি।

বাগদা ও গলদা চিংডির পোনা ধরার নামে ভোলা গলাচিপা বরগুনাসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলে প্রতিদিন মশারির জাল দিয়ে নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক লাখ মাছের পোনা নিধন করায় সামুদ্রিক মাছের বংশবিস্তার হুমকিতে পড়েছে। এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পোনা সংগ্রহকারীরা একটি বাগদা পোনা ধরতে গিয়ে ধ্বংস করছে ৩৮ প্রজাতির চিংডি ছাড়াও ছয় প্রজাতির অন্যান্য মাছ এবং ৫৬ প্রজাতির জুপ্লাংটনসহ ১০০ প্রজাতির জলজ প্রাণী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল কয়েকজন পোনা ব্যবসায়ী বলেন, ট্রাকভেদে ১৮ থেকে ৩০টি পাতিল বহন করা যায়। একেকটি পাতিলে ১০ হাজার করে পোনা বহন করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাকে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ পোনা বহন করা হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন এই তিন পথে ৩০টি ট্রাকে গড়ে ৬০ লাখ পোনা পাচার হয়। এ ছাড়া নদীপথে ট্রলারে করে পাচার হয় কমপক্ষে আরও ৪০ লাখ পোনা। বাগদা রেণুর প্রতি হাজার এক হাজার টাকায় কিনে মোকামে দেড় হাজার এবং গলদা পোনা দেড় হাজার টাকায় কিনে মোকামে দুই হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে রেনু পোনা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে টুলু, হারুন ও রনি। আর এই অবৈধ টাকার ভাগ নিচ্ছেন ওই আ.লীগ নেতার ঘনিষ্ঠ একজন। যিনি বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড এলাকায় মৎস ব্যবসার সাথে জড়িত।