বরিশালে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার আশ্বাসে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশালের মুলাদী উপজেলায় বিনা সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলে জামানত সংগ্রহের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে এসকেএস নামে একটি এনজিও উধাও হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাধারণ গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে এনজিও এসকেএসের অফিসে তালা দেখে এবং কর্মীদের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারে এবং মুলাদী থানায় অভিযোগ করেন।

এর আগে গত সোমবার রাতে মুলাদী বাঁধের উপর বয়াতি মার্কেটের একটি কক্ষের সঙ্গে রাখা সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলে এবং গা ঢাকা দেয় এসকেএসের কর্মীরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে প্রতারণার শিকার কয়েক জন গ্রাহক মুলাদী থানায় অভিযোগ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ সপ্তাহ আগে পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর উপজেলা থেকে দুই জন প্রতারক মুলাদী, হিজলা উপজেলা ও কাজিরহাট থানার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার কথা জানায়। ওই সময় প্রতারকরা কয়েকটি বাড়ি নিয়ে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে ঋণ দেবে বলে ঘোষণা দেয়।

এসময় তারা সাধারণ মানুষের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকা ঋণ দেয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা জামানত চায়। বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় কোনো কিছু না জেনেই সরল বিশ্বাসে তথা কথিত এনজিও এসকেএফের কর্মীদের কাছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে টাকা প্রাপ্তির একটি টোকেন দিয়ে মুলাদী বাঁধের উপর বয়াতি মার্কেটে অফিস রয়েছে বলে ঠিকানা লিখে দেয় এবং ৭ জুলাই ঋণের টাকা দেয়ার কথা জানায়।

এভাবে এসকেএফের দুই কর্মী মাত্র ১৫ দিনে মুলাদী, হিজলা উপজেলা এবং কাজিরহাট থানার প্রায় ৮শ’ মানুষের কাছে থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গারমোনা গ্রামের বলু হাওলাদারের ছেলে নূর মোহাম্মাদ জানান, ভাঙ্গারমোনা গ্রামের ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে এসকেএস জনপ্রতি ৫ হাজার করে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। উত্তরচর ডাকাতিয়া গ্রামের আসমা বেগম জানান, তার এলাকায় ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করেছে এসকেএস। প্রত্যেককে বিনা সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার জন্য ইউনিট থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জামানত নিয়েছে এসকেএসের ২ কর্মী।

কাজিরহাট থানার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের সিকিম আলী হাওলাদারের ছেলে মনির হোসেন জানান, ওই এলাকায় তাকে দল নেতা করে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেককে বিনা সুদে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেয়ার জন্য ইউনিট থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে এসকেএসের দুই কর্মী।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জামানতের টাকা প্রদানকারী গ্রাহকরা ঋণ নেয়ার জন্য মুলাদী বাঁধের উপর বয়াতি মার্কেটে গিয়ে কোনো সাইনবোর্ড বা অফিস দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে বিক্ষোভ করেন। গ্রাহকরা ভবন মালিককের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, কোনো এনজিওর কাছে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়নি। এনজিও’র কাছে ভাড়া না দেয়া হলেও একটি কক্ষের সামনে এনজিও’র সাইনবোর্ড কি করে এলো এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বয়াতি মার্কেটের মালিক মোশারফ হোসেন বয়াতি জানান, এসকেএস নামের এনজিও’র দু’জন কর্মী কিছুদিন আগে মার্কেটের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়ার জন্য আসে। কিন্তু এনজিও’র মূল কাগজপত্র এবং চুক্তিপত্র ও অগ্রিম ভাড়া ছাড়া অফিস ভাড়া দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিলে এসকেএসের কর্মীরা তাদের ‘বড় অফিসার’ আসার কথা বলে সময় ক্ষেপণ করে এবং কক্ষের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগানোর অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করা হয়। পরে এনজিও কর্মীরা ৬ আগস্ট অর্থাৎ সোমবার চুক্তিপত্র সম্পাদনের কথা জানিয়ে রোববার সন্ধ্যায় একটি কক্ষের সামনে এসকেএফের সাইনবোর্ড লাগায়। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসকেএস কোনো চুক্তিপত্র সম্পাদন না করায় অন্য একজনের কাছে অফিস ভাড়া দেয়া হয় এবং এসকেএস সাইনবোর্ড সরিয়ে নেয়। প্রতারণার শিকার কয়েক জন গ্রাহক এ বিষয়ে মুলাদী থানায় অভিযোগ করেছেন।

এ ব্যাপারে মুলাদী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান জানান, টাকা দেয়ার আগে এনজিও এসকেএস’র সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। একটু সচেতন হলে এভাবে তাদের প্রতারণার শিকার হতে হতো না।

তিনি জানান, কয়েক জন গ্রাহকের অভিযোগ পেয়েছি। এনজিও এসকেএস’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্ধানে আশপাশের থানায় বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে।