বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার বিকালে নগরীর সোহেল চত্বরে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীর বিপক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘনের নয়টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে নৌকার প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়েছে, প্রকাশ্যে মিছিল ও শো-ডাউন করেছে। উঠান বৈঠকের নামে প্রকাশ্যে জনসভা করেছে, সরকারি অফিসের সামনে এবং জনগণের চলাচলের বিঘ্ন ঘটিয়ে রাস্তার পাশে নির্বাচনী অফিস নির্মাণ করেছে। বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলের খুনি ও সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে কয়েকশ মোটরসাইকেল সহকারে নগরীর সদর রোডের মতো জায়গায় মহড়া দিয়েছে।’
জাহাঙ্গীর তার লিখিত বক্তেব্যে বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের স্ত্রী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন এবং ৩০ জুলাইয়ের পরে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমাদের প্রচারের মাইক থামিয়েও প্রচারকারীকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন।’
‘মজিবর রহমান সরোয়ার ইতিপূর্বে এই সিটির মেয়র ছিলেন। তিনি এমপি এবং হুইপও ছিলেন। কিন্তু এমন কোনো দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড উনি দেখাতে পারবেন না যার ফলে জনগণ তাকে ভোট দেবেন। বরং মেয়র থাকাকালে বরিশালের মানুষ তাকে টেন পার্সেন্ট হিসেবেই জানতেন। এছাড়া বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতা এবং আমাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দক্ষতা ও আধুনিক বরিশাল গড়ার ঘোষণা ইতিমধ্যে বরিশালের মানুষের মন জয় করেছে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা সিলেটে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আশংকা করছি তারা বরিশালেও এমন কিছু করতে পারে। তবুও আমরা আশাবাদী বরিশালের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিপুলভাবে জয়ী করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই: সাদিক
এদিকে শুক্রবার গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘বরিশালে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা নিয়ে সংশয় বা শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বরিশালের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’
নগরীর ২৯নং ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগের ফাঁকে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত নয়টি অভিযোগ দিয়েছি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে। সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অ্যাকশন নেয়া হয়নি। অভিযোগগুলোর মধ্যে গুরুতর অভিযোগটি ছিল আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া। বিএনপি প্রার্থী বস্তি বা কলোনিবাসীদেরও হুমকি দিয়েছেন।’
সাদিক বলেন, ‘একটি নির্বাচনে তো অভিযোগ থাকবেই। আর বরিশালে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে নির্বাচন নিয়ে শংকা থাকবে। এতবড় একটি জনগোষ্ঠীর বসবাস বরিশালে। এখানে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে নির্বাচন নিয়ে। আর শংকার এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা ভালো বলতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকতো তাহলে সেটার উত্তর আমি দিতাম। বরিশালে নির্বাচনী পরিবেশ অনেক সুন্দর রয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে শংকার কোনো কারণই নেই। এবারের নির্বাচনে কোনো মারামারি নেই, কাটাকাটি নেই। বিগত নির্বাচনগুলোতে তো খুনের ঘটনাও ঘটেছে।’
বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কারো গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমার জানা নেই। অর্থাৎ খোঁজ নিতেও পারছি না। আমি সারাদিন জনগণের দোড়গোরায় যাচ্ছি। আমার চিন্তাভাবনা এখন নগরের উন্নয়ন নিয়ে। আমি নির্বাচিত হলে কী করব সেটাই ভাবছি বা পর্যালোচনা করছি। এখন কে গ্রেপ্তার হলো বা কে ছাড়া পেল সেসব বিষয় আমার জানা নেই। টেলিভিশন বা পত্রিকায় কী নিউজ হচ্ছে সেটা দেখার সময়ও পাচ্ছি না আমি।’
‘আমি জনগণের জন্য কাজ করার প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। আমি সদর রোডে এসে ফটোস্যুট করে আবার বাসায় ঢুকে যাই না। ভোটারদের প্রতি আমার একটি আহ্বান থাকবে যে, ৩০ তারিখ কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি তাকে ভোট দেবেন।’