আগামী ৩০ মে (বৃহস্পতিবার) শুরু হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসির ঈদ স্পেশাল সার্ভিস। যা চলবে ঈদের পর ১১ জুন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষ আর ঈদের পরে কর্মমুখী মানুষের বাড়তি চাপ সামলাতেই প্রতিবছর বেসরকারি লঞ্চগুলোর পাশাপাশি স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করে আসছে বিআইডব্লিউটিসি।
বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদের বিশেষ সার্ভিসে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৯০ বছর পার করতে যাওয়া প্যাডেল স্টিমারসহ বিআইডব্লিউটিসির নৌযানগুলো।
তবে এবারই প্রথম ৯০ দশকের পুরনো ‘পিএস অস্ট্রিচ’ নামের স্টিমারটি এবারের ঈদে আর যাত্রীসেবা দিচ্ছে না। এরমধ্যে অস্ট্রিচের যাত্রীসেবার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ জানান, পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিআইডব্লিউটিসির ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার অস্ট্রিচ ভাসমান রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় কর্তৃপক্ষ, সে অনুযায়ী এটি যাত্রীসেবায় আর নেই। আর এ কারণেই পিএস অস্ট্রিচ এবারে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের যাত্রী সেবায় নিয়োজিত থাকছে না।
তবে এছাড়া অবশিষ্ট পাঁচটি জাহাজ নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষ সার্ভিসে যুক্ত হয়ে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাত্রী পরিবহন করবে।
সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ ও মোংলা নৌ-রুটে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে খুলনায়ও পরিচালিত হয়ে থাকে যাত্রীসেবা কার্যক্রম।
দক্ষিণাঞ্চলের এসব রুটে যাত্রীসেবায় দীর্ঘবছর ধরে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৯০ বছরের পুরনোসহ বেশ কয়েকটি প্যাডেল স্টিমার। যার মধ্যে ১৯২৯ সালে নির্মিত পিএস অস্ট্রিচ এবারই প্রথম বিআইডব্লিউটিসির নৌ-বহরে নেই।
এটি ১৯২৯ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মাণের পর ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম এর স্টিম ইঞ্জিন সরানো হয় এবং প্রতিস্থাপন করা ডিজেল ইঞ্জিন। নয়শ যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ২২৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৩০ ফুট প্রস্থের স্টিমারটি ১৯৯৬ সালে ফের সংস্কার করা হয়েছিলো।
যদিও পিএস অস্ট্রিচ ছাড়া এবার ১৯৩৮ সালের পিএস মাহসুদ, ১৯৫০ সালের পিএস লেপচা ও টার্ন ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
এর বাইরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রী পরিবহনের বহরে সংযুক্ত করে এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি নামের দুইটি বিলাসবহুল জাহাজও নিয়োজিত থাকছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সেবায়।
১৯২৯ সালে তৈরি পিএস গাজী ও ১৯৫১ সালের পিএস শেলা নামের আরো একটি প্যাডেল স্টিমার ছিলো বিআইডব্লিউটিসির বহরে। যার মধ্যে গাজী ১৯৯৮ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শেলা বছর ছয় আগে সার্ভিস থেকে বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে প্রায় ৯০ বছরের পুরনো প্যাডেল স্টিমারে চড়ে গন্তব্যে যাওয়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে থাকে বিভিন্ন শঙ্কা। এর মূল কারণ যান্ত্রিক বিভিন্ন ত্রুটিতে প্রায়ই মাঝ নদীতে বিকল হয়ে পড়ে প্যাডেল স্টিমারগুলো।
তবে স্পেশাল সার্ভিসে এমন কোনো সমস্যা হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রতিটি জাহাজেরই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু মেরামত করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রাপথের যেকোনো ঝামেলা মোকাবিলায় প্রতিটি জাহাজে থাকবে টেকনিশিয়ান। আর প্রকৌশলীরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন। যাত্রীদের নিরাপদে ও নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিআইডব্লিউটিসির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে এবার স্টিমার সার্ভিসে ঈদে বাড়ি ফেরা এবং ঈদের পরে কর্মস্থলে যাওয়া যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাত্রা করতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারি সংস্থা হওয়ায় জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে জাহাজের ৫০ ভাগ টিকিটের আবেদন ১৫ রমজান থেকে অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো ঢাকা অফিস থেকে দেওয়া হচ্ছে, তাই বরিশালে টিকেটের কোনো ঝামেলা নেই। তবে যাত্রীর চাপ থাকলে ঢাকায় ফিরতি স্পেশাল সার্ভিস ১১ জুনের জায়গায় বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে বিআইডব্লিউটিসির সি-ট্রাক সার্ভিস চালু থাকার কথা থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তাই বরিশাল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ওই রুটে সরকারি এ সংস্থার যাত্রীসেবার কোনো পরিকল্পনা নেই।