ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সামিউল ইসলাম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে এসেছিলেন। আজ শনিবার ঢাকায় ফেরার জন্য বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসেছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি এই বাসস্ট্যান্ডে কাঁঠালবাড়িতে যাওয়ার জন্য বেসরকারি বিএমএফ বাস সার্ভিসের কাউন্টারের সামনে টিকিট কিনতে লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পরও তিনি টিকিট পাননি।
তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি। স্ত্রী ও শিশুসন্তান রোদ-গরমে বিপর্যস্ত।
সামিউল আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘লঞ্চে ভোগান্তি হবে ভেবে এই পথ ধরেছিলাম।
কিন্তু এখানে এসেও যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’ বললেন, আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও তিনি টিকিট পাননি।
অবশেষে তিনি বিআরটিসি বাস কাউন্টারে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কখন টিকিট পাবেন, তা-ও নিশ্চিত না। কারণ, এখানেও দীর্ঘ লাইন।
আজ দুপুরে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে গিয়ে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল দেখা যায়। গন্তব্যে যেতে সবাই রীতিমতো যুদ্ধে শামিল।
শেষ বৈশাখের তীব্র গরম আর এর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভ্যাপসা আবহাওয়া যোগ হয়ে সবাই হাঁপাচ্ছিলেন।
বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, বেসরকারি বিএমএফ পরিবহনের বাসগুলোর কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। ৩৫০ টাকায় সেখানে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
তবে ৩-৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও অনেকে টিকিট পাননি। আবার টিকিট পেলেও দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা।
এ জন্য অনেকে এই পরিবহন সংস্থার বাসে রাস্তা থেকেই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে বাসে উঠে পড়ছেন।
বাসগুলো নথুল্লাবাদ টার্মিনালে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই সামনের সড়ক থেকেই যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০-৫০০ টাকা করে নিয়ে বাসে তোলা হচ্ছে।
এভাবে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে চরম ভোগান্তির মধ্যে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঈদের বাড়তি যাত্রীর চাপের সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো।
৩০০ টাকার ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করছে তারা। তারপরও স্বস্তিতে যাত্রার নিশ্চয়তা মিলছে না। অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না।
বেলা আড়াইটার দিকে এ রকম একটি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল।
এ সময় বাসটির সুপারভাইজারকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁঠালবাড়ি থেকে আমাদের খালি গাড়ি চালিয় আসতে হয়।
এ জন্য বাড়তি ভাড়া নেওয়া নেওয়া হচ্ছে।’ ওই সুপারভাইজারের নাম জানতে চাইলে তিনি নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
ঈদের বাড়তি যাত্রীর চাপের সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো।
৩০০ টাকার ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করছে তারা। তারপরও স্বস্তিতে যাত্রার নিশ্চয়তা মিলছে না।
অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ হয়ে অনেকে বিকল্প পথে ভেঙে ভেঙে কাঁঠালবাড়িতে (মাওয়া) যাচ্ছেন।
মশিউর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বিএমএফ কাউন্টার থেকে টিকিট না পেয়ে পরে সামনের রাস্তায় এসে ৪০০ টাকা দিয়ে ওই কোম্পানির বাসে উঠে পড়েন।
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন।
আজ দুপুর আড়াইটার দিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে আসা মামুন হোসেন পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে টিকিটের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
এসে শোনেন ৫০০ টাকা করে টিকিটের মূল্য। কিন্তু ঈদে বাড়ি এসে টাকা শেষ। যাওয়ার জন্য ভাড়া হিসেবে যে টাকা রেখেছিলেন, তার চেয়ে এখন বেশি লাগছে।
এরপর বিকাশে বাড়তি টাকা আনেন এক আত্মীয়ের কাছ থেকে। পরে টিকিটের জন্য দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
কিন্তু টিকিট না পেয়ে হাজী ক্লাসিক নামের একটি বাসে ৫০০ টাকা করে টিকিট কেটে কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন।
বরিশাল-কাঁঠালবাড়ি-মাওয়া সড়কপথের বিএমএফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. নয়ন দাবি করেন, চাপ সামলাতে ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে যাত্রীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
ভাড়া আগের ৩০০ টাকা করেই রাখা হচ্ছে। তিনি বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বেসরকারি পরিবহনের মতো সরকারি বিআরটিসি পরিবহনেও টিকিটপ্রতি ৫০ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাচ্ছেন না। আগে বিআরটিসি বাসে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত ভাড়া ছিল নন-এসি ২৫০ টাকা ও এসি ৩০০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৩০০ ও ৩৫০ টাকা করা হয়েছে।
মরিয়ম আক্তার নামের বরিশাল নগরের জেলখানা মোড়ের এক যাত্রী বিআরটিসি কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বেলা দেড়টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। এখন আড়াইটার বেশি বাজে। জানি না কথন টিকিট পাব।’
আরেকজন যাত্রী সোহেল আরমান বলেন, দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিআরটিসির টিকিট পেয়েছেন। ৩৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আগে এই টিকিট ৩০০ টাকা ছিল।
বিআরটিসি ডিপোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক সময় বরিশাল কাঁঠালবাড়ি পথে নিয়মিত ৫টি বাস যাতায়াত করে। কিন্তু আজ এই পথে যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় ১৪টি বাস চলাচল করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর এক কর্মকর্তা দুপুরে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা প্রতি টিকিটে ৫০ টাকা করে বাড়তি নিচ্ছি, এটা ঠিক। তবে এটা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম।
ঈদে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কারণ, কাঁঠালবাড়ি থেকে আমাদের বাস যাত্রী ছাড়াই চালিয়ে বরিশালে আসে।
যাতে লোকসানে পড়তে না হয় সে জন্য এই বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে। ঈদের ফিরতি যাত্রা শেষ হলে আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া হবে।’