বরিশালে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ক্রমশই বাড়ছে। গত এক মাসের তুলনায় বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। নগরীসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বছর বরিশালে নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় ভয়াবহ ভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই সময় এ অঞ্চলের পানিতে কলের জীবাণু পেয়েছিল।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এ এস এম আহসান কবির জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮১০ জন। তবে এ মাসের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ জনে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
সূত্রমতে, বিভাগে গত ২০ মার্চ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯০ জন। একইভাবে ২১ মার্চ ১৩০ জন, ২২ মার্চ ১৪৯ জন, ২৩ মার্চ ১৬৮ জন, ২৪ মার্চ ১৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, চৈত্র-বৈশাখে পানিবাহিত এ রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নদী-খালের পানি ব্যবহারকারীরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, চৈত্রে গ্রামাঞ্চলের পুকুর-ডোবা ও খালের পানির পরিমাণ কমে যায়।
দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় তার মধ্যে এক ধরনের জীবাণু তৈরি হয়। ওই পানিতেই গ্রামের মানুষ থালাবাটি ধোঁয়া, রান্না কাজে ব্যবহার এবং গোসল করছেন। এতে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডা. শ্যামল কৃষ্ণ বলেন, নগরের পথচারীরা গরমে পিপাসু হয়ে পথেঘাটে শরবতসহ নানা মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। এতেও ডায়রিয়া ছড়াতে পারে।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে এ মাস থেকে ডায়রিয়া রোগী বেশি ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখানকার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ সামসুন্নার জানিয়েছেন গত ২০ মার্চ ডায়রিয়ায় রোগী ভর্তি হয়েছে ১২ জন, ২১ মার্চ ১৫ জন, ২২ মার্চ ১২ জন, ২৩ মার্চ ৮ জন, ২৪ মার্চ ৩ জন। তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকেই ডায়রিয়া রোগী বেশি আসছে। বেশির ভাগই পানির মাধ্যমে কিংবা ফুড পয়জনিংয়ের কারণে ছড়িয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি বলে তিনি জানান।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী সম্পা আক্তার ও জাহিদ হোসেন বলেন, গরমে হঠাৎ পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তারা একদিন ছিলেন হাসপাতালে। পরিবারের আরও কয়েকজনের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বরিশাল নগরের মতো গ্রামগঞ্জেও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাহারাজ হায়াত বলেন, এ মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা বেশি ভর্তি হয়েছে। তবে নারীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার মোট ১৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ছিলেন। বুধবার ছিল ৫ জন। তাঁর ধারণা মায়েরা ল্যাকোটোজেন জাতীয় দুধ খাওয়ায় তাই বাচ্চারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অবশ্যই হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। বড়দের পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুভাষ সরকার বলেন, গরমে পানির সমস্যায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এব্যপারে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব জেলায় কিছুটা বাড়ছে। খালের, পুকুরের পানি পান করা যাবে না-এমন নির্দেশনা তারা স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে জনগণের মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছেন।
এমনকি থালা বাসন ধোঁয়ার ক্ষেত্রেও নদী, খাল, বিল, পুকুরের পানি ব্যবহার নিষেধ করছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত বছর পানিতে কলেরার জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। যেকারণে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে তারা প্রচার প্রচারণা ও স্বাস্থ্যবার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন।