বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ে না করায় নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া মাদরাসাছাত্রী সুমি আক্তারের (১৩) মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যায় সে। পরে খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুমি শওকত আলী ব্যাপারী ও শিউলি আক্তারের মেয়ে। শিউলি আক্তারের সঙ্গে শওকত আলীর অনেক আগেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। তাই শিউলি আক্তার একমাত্র সন্তান সুমিকে নিয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন। তিনি গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সুমি জাহাপুর দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
সুমি আক্তারের মা শিউলি বেগম অভিযোগ করেন বলেন, ‘আমার মেয়ে সুমির সঙ্গে রাকিব (৩০) নামে বিবাহিত এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাকিব গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের চন্দ্রাহার এলাকার মোবারক ফকিরের ছেলে। তার মা সেইন্ট বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওতে চাকরি করায় আমার পূর্বপরিচিত ছিল। ঘটনার প্রায় দুই মাস আগে মেয়েকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাকিবের বাড়িতে যাই। সেখানে রাকিবের সঙ্গে সুমির পরিচয় হয়।’
আরও বলেন, ‘আমি বিষয়টি টের পেয়ে মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করি এবং রাকিবের মায়ের কাছে নালিশ দেই। রাকিবের মোবাইল নম্বর ব্লক করে রাখলে সে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিল। রাকিব পরে সুমিকে বিয়ে করার কথা বলে। এরপর তদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সুমি রাকিবকে বিয়ের জন্য বলে। তখন বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে শুরু করে সে।’
শিউলি আক্তার বলেন, ‘২১ জানুয়ারি রাকিবকে ফোন করে সুমি বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ সময় রাকিব সুমিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ফোন রেখেই অভিমানে সে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সুমির শরীরের ৪৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেরত দেওয়ার পর বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। আজ সকালে তার মৃত্যু হয়।’
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, সুমির মৃত্যুর পর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুমির স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুমি ও রাকিবের মা বান্ধবী হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে আসা-যাওয়া ছিল। একপর্যায়ে সুমি ও রাকিব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তবে রাকিব বিবাহিত। তার স্ত্রী রয়েছে। সুমিকে বিয়ে করতে আগের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য রাকিব ১ লাখ টাকা দাবি করেছিল। এ নিয়ে সুমি ও রাকিবের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ কারণে অভিমানে সুমি নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল। এ ঘটনায় সুমির মা বাদী হয়ে রাকিবের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।